বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

কাজে আসছে না দুই সিটির উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

এডিস মশা ওষুধ-প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় কাজে আসছে না মশার ওষুধ। দুই সিটি করপোরেশনের বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিকে পাশ কাটিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এ অবস্থায় প্রচলিত ওষুধের মাত্রা দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। মেডিকেল টিম গঠন করে আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের খোঁজখবর নিতে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশে না ভারত, মালেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরেও হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা বসে নেই। নগর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করে মাঠে আছে। অচিরেই শহরকে ডেঙ্গুমুক্ত করব। আমরা শিগগিরই বাসাবাড়িতে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেও মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য কর্মীদের পাঠাব। প্রচলিত মশার ওষুধে কাজ না হওয়ায় কীটনাশকের ঘনত্ব বাড়িয়ে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএনসিসি। ‘মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ব্যবহৃত অধিকতর কার্যকর কীটনাশক প্রবর্তন’ শীর্ষক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সভায় বিশেষজ্ঞরা পরবর্তী কীটনাশক না কেনা পর্যন্ত বর্তমানে ব্যবহৃত কীটনাশকের ঘনত্ব বাড়িয়ে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি কীটনাশক কেনার আগ পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদে অধিকতর কার্যকর কীটনাশক কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী নতুন কীটনাশক সংযোজন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।’ মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক নির্বাচন, কার্যকারিতা পরীক্ষা, ক্রয় প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা এবং কীটনাশকের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণে ১০ সদস্যের কারিগরি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন ১০ বছর ধরে কীটনাশকের প্রচলিত মাত্রা ব্যবহার করে আসছে। এই ওষুধে এখন পূর্ণ বয়স্ক মশা মরছে না বলে আইসিডিডিআরবির একটি গবেষণায় উঠে আসে। তিন বার পরীক্ষার পরও মশা না মারা যাওয়ার ঘটনায় গত সপ্তাহে ওষুধ সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ডিএনসিসি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭১ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১ হাজার ২২ জন। জুলাই মাসের ১৫ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৬৭ জন। জুনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৫৯ জন। সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। একইভাবে আক্রান্তের সংখ্যাতেও প্রকৃত হিসাব উঠে আসছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঝুঁকি রোধে শরীরে জ্বর, ব্যথা এবং র‌্যাশ উঠলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ডেঙ্গু আক্রান্তদের প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুরে ১৫ দিনে ২২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত : গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, রাজধানী ঢাকার পর গাজীপুর মহানগরীতেও ডেঙ্গুর বিস্তার হচ্ছে। গত ১৫ দিনে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেশকিছু রোগী ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস জানান, গতকাল বিকাল পর্যন্ত ১৫ দিনে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ২২ জন রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে ১৭ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা, একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড ও চারজনকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৪ জনের মধ্যে ৩ জন নারী এবং একজন পুরুষ। ডেঙ্গু আক্রান্তদের অধিকাংশই গাজীপুর জেলা শহরের আশপাশের এলাকার বাসিন্দা।

সর্বশেষ খবর