শিরোনাম
শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

আতঙ্কে সিলেটের উপজেলা চেয়ারম্যানরা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

আতঙ্কে সিলেটের উপজেলা চেয়ারম্যানরা

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও স্বস্তিতে নেই সিলেট বিভাগের ৯ চেয়ারম্যান। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে নির্বাচন করায় তাদের সামনে এখন ঝুলছে বহিষ্কারের খড়গ। আজ শনিবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকম লীর সভায় তাদের সাময়িক বহিষ্কার ও কারণ দর্শানোর দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার কথা জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বলছেন, প্রার্থী বাছাইয়ে দলীয় ভুল সিদ্ধান্ত ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের চাপে তারা প্রার্থী হয়েছিলেন। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই তারা প্রার্থী হয়েছিলেন। এ ছাড়া তাদের বিজয়ই প্রমাণ করে তাদের জনপ্রিয়তা ও তৃণমূলের  গ্রহণযোগ্যতা। তাই বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশাবাদী তারা।

গত উপজেলা নির্বাচনে সিলেটের ১২টি উপজেলার মধ্যে চারটিতে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এর মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন আরও হাফডজন আওয়ামী লীগ নেতা। বিদ্রোহীদের ধাক্কায় জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারেননি জাহাঙ্গীর। জয় ছিনিয়ে নেন বিদ্রোহী প্রার্থী ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আহমদ। কিন্তু জয়ী হয়েও দুশ্চিন্তা কাটছে না শামীমের। শামীম ছাড়াও দলীয় শাস্তির মুখোমুখি রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী ওই উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবদুল বাছির, সাধারণ সম্পাক আফতাব আলী কালা মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াকুব আলী, ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হক ও হাফিজ মাসুম। কোম্পানীগঞ্জের শামীম আহমদের মতো বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে গোয়াইনঘাটে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ, জৈন্তাপুরে উপজেলা শাখার সহসভাপতি কামাল আহমদ ও ফেঞ্চুগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নূরুল ইসলাম বিজয়ী হন। এ ছাড়াও সিলেটের অন্য উপজেলাগুলোর মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন সিলেট সদরে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম সিরাজী, কানাইঘাটে জেলা শাখার নেতা মোস্তাক আহমদ পলাশ, গোয়াইনঘাটে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা গোলাপ মিয়া, বিয়ানীবাজারে উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, দক্ষিণ সুরমায় উপজেলা শাখার সদস্য ময়নুল ইসলাম। কিন্তু তাদের কেউই জয়ের দেখা পাননি। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় ৭ জন নেতা বিদ্রোহী হয়ে বিজয়ী হয়েছেন মাত্র একজন। বিজয়ী মঞ্জুর আলম চৌধুরী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েও তিনি আছেন দলীয় শাস্তি আতঙ্কে। এ ছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল, দিরাইয়ের সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিন, শাল্লার সহসভাপতি অ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাস, ধর্মপাশার সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বিলকিস ও জামালগঞ্জের সহসভাপতি রেজাউল করিম শামীম। মৌলভীবাজার জেলার তিন উপজেলায় নৌকা ডুবিয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহীরা। জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও দলীয় শাস্তির মুখে রয়েছেন তারা। নির্বাচিত এই চেয়ারম্যানরা হলেন, বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়েব আহমদ, জুড়ির চেয়ারম্যান হল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক ও কুলাউড়ার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমান। হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৯ জনের মধ্যে পাস করেছিলেন শুধু সদর উপজেলার মো. মোতাচ্ছিরুল ইসলাম। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পাস করতে না পারলেও দলীয় শাস্তির সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুল আলম মাহফুজ, জেলা শাখার সদস্য রফিক আহমেদ, চুনারুঘাটের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের,  জেলা শাখার সাবেক সহসভাপতি আবদুল কাদির চৌধুরী, আজমিরিগঞ্জের মো. আলাউদ্দিন, বানিয়াচংয়ের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন খান, মাধবপুরের প্রবাসী নেতা এহতেশামুল বার চৌধুরী লিপু ও শায়েস্তাগঞ্জের আলী আহমদ খান। এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কামাল আহমদ বলেন, দল থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে নিজের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতারও প্রমাণ দিয়েছি। এরপরও দল যদি মনে করে এর মাধ্যমে সংগঠনবিরোধী কিছু করেছি তবে শোকজ করলে জবাব দেব। তবে আমি আশাবাদী দল আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবে অথবা ক্ষমা প্রদর্শন করবে।

সর্বশেষ খবর