শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার

কৃষি উপকরণ বিতরণে সীমাহীন অনিয়ম

বিশেষ প্রতিনিধি

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বাঙালিরা সীমাহীন বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সরকারি সেবা ও সরঞ্জাম প্রাপ্তিতে বৈষম্যের কারণে বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ফলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাঙালিরা উপজাতীয়দের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়ছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে এবং ব্যাহত হচ্ছে সেখানকার সার্বিক উন্নয়ন। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলার আটটি উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের মাধ্যমে উপজাতি এবং বাঙালি কৃষিজীবীদের মধ্যে ১৯১টি পাওয়ার টিলার ও সেচ পাম্প বিতরণ করা হয়, যার অধিকাংশই পেয়েছে উপজাতীয় সদস্যরা। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই বাঙালি। জানা গেছে, গুইমারা উপজেলায় ১৩টি পাওয়ার টিলারের সবই দেওয়া হয়েছে উপজাতীয়দের। বাঙালিরা একটিও পায়নি। অন্যদিকে সেখানে ১৩টি সেচ পাম্পের ১২টি পেয়েছে উপজাতীয়রা। মাত্র একটি দেওয়া হয়েছে একজন বাঙালিকে। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ৭টি পাওয়ার টিলারের মধ্যে ছয়টি দেওয়া হয়েছে উপজাতীয়দের। একটি পেয়েছে বাঙালি একজন। সেখানে পাঁচটি সেচ পাম্পের মধ্যে চারটি পেয়েছে উপজাতীয়রা। একজন বাঙালী পেয়েছেন একটি সেচ পাম্প। মানিকছড়ি উপজেলায় উপজাতি কম, মাত্র ২৯ শতাংশ এবং বাঙালি ৭১ শতাংশ। সেখানে ১১টি পাওয়ার টিলারের মধ্যে ১০টিই পেয়েছে উপজাতীয়রা। মাত্র একটি পেয়েছে একজন বাঙালি। সেখানে ১৩টি সেচ পাম্পের মধ্যে ১২টি দেওয়া হয়েছে উপজাতীয়দের। মাত্র একটি দেওয়া হয়েছে এক বাঙালিকে। সেখানে মোট ২৪টি পাওয়ার টিলার ও সেচ পাম্পের মধ্যে মাত্র দুটি পেয়েছেন দু’জন বাঙালি কৃষিজীবী। খাগড়াছড়ি উপজেলায় ৩৪টি কৃষি সরঞ্জামের মধ্যে বাঙালি পেয়েছে চারটি। সেখানে ১৮টি পাওয়ার টিলারের মধ্যে ১৪টি দেওয়া হয়েছে উপজাতীয়দের। মাত্র চারটি দেওয়া হয়েছে চার বাঙালিকে। ১৬টি সেচ পাম্পের মধ্যে সবই দেওয়া উপজাতীয়দের। বাঙালিদের একটিও দেওয়া হয়নি। দীঘিনালা উপজেলায় ১৫টি পাওয়ার টিলারের মধ্যে উপজাতীয়দের দেওয়া হয়েছে ১১টি আর বাঙালিদের দেওয়া হয়েছে চারটি। সেখানে পাঁচটি সেচপাম্পের মধ্যে চারটি পেয়েছে উপজাতীয়রা। মাত্র একটি পেয়েছে এক বাঙালি কৃষিজীবী। একইভাবে মহালছড়ি উপজেলায় ১২টি পাওয়ার টিলারের মধ্যে ১০টি পেয়েছে উপজাতীয়রা। দুই বাঙালি পেয়েছে দুটি। ১২টি সেচপাম্পের মধ্যে সবই উপজাতীয়দের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাঙালিদের একটিও দেওয়া হয়নি। সূত্র জানায়, সরকারি সেবা ও সরঞ্জাম বিতরণের ক্ষেত্রে এমন অনিয়ম দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের প্রতি এই বৈষম্যমূলক নীতির কারণে সেখানকার বাঙালিরা ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা মন্তব্য করতে সম্মত হননি।

সর্বশেষ খবর