রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

নিজের দুর্গেই কোণঠাসা বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

নিজের দুর্গেই কোণঠাসা বিএনপি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসনটি (বগুড়া-৬) রক্ষা হলেও বগুড়ায় বিএনপির দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। বিএনপির দুর্গে বিএনপিই যেন কোণঠাসা হয়ে আছে। নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে জেলায় ভিপি সাইফুলের যুগ অবসান হওয়ার পথে। শুরু হচ্ছে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের যুগ। বগুড়া বিএনপির জেলা কার্যালয়ে সিনিয়র নেতারা তেমন আসেন না। সিনিয়ররা বসেন সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদারের বাসভবনে। দীর্ঘদিন ধরে মামলা-হামলায় বেশখানিক ক্ষয়ে গেছে বগুড়ার বিএনপি। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে না আসা, ভাঙচুর, নাশকতা কর্মকান্ডে র সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা-হামলায় একরকম নুয়ে পড়ে বিএনপির কর্মকা । জেলা বিএনপি ছাড়াও তার অঙ্গসংঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। সদর, পৌর, থানা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোও শিথিল অবস্থায় রয়েছে। মামলার ভারে নুয়ে পড়া নেতা-কর্মীর কিছু অংশ জেল হাজতে। কিছু অংশ মামলার হাজিরা দিয়ে, আর বাকিরা গা ঢাকা দিয়ে পিঠ বাঁচিয়ে চলেছেন। দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যরাও মাঠে নেই। সম্প্রতি জেলা বিএনপির কমিটি গঠন ও সদর আসনে  নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কিছুটা উজ্জীবিত হলেও সেটিও দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়াকে বিএনপির দুর্গ বা ঘাঁটি বলা হতো। সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার সাতটি আসনেই বিএনপির জয়জয়কার ছিল। কিন্তু, ওয়ান-ইলেভেনের পর বগুড়া বিএনপি নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ে। ওয়ান-ইলেভেনের আগে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা তারেক রহমানের নির্দেশ ছাড়া বগুড়ায় বিএনপির কোনো কিছুই হয়নি। দলের সর্বস্তরে কমিটি গঠন- সবখানেই ছিল তাঁর প্রভাব। ওয়ান-ইলেভেনের পর তারেক রহমানের সেই ক্ষমতায় ভাটা পড়ে যায়। তবে তারেকের ইশারায় ২০১১ সালে গঠিত হয় জেলা কমিটি। তাতে সাইফুল ইসলাম সভাপতি ও জয়নাল আবেদীনকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। দুই বছর পর সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের কথা থাকলেও তা হয়নি। এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধের প্রভাব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ওপর পড়ে। থেমে যায় যুবদল ও ছাত্রদলের পুনর্গঠনও। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল থেকে বিএনপির পুনর্গঠনের দাবি জোরালো হতে থাকে। ভিপি সাইফুলের সঙ্গে তার বিরোধীদের দূরত্ব আরও বাড়ে। এ অবস্থায় গত ১৫ মে ৩১ সদস্যের জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়।

 বিলুপ্ত জেলা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামের অনুসারীরা আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন। এরই মধ্যে জেলা কমিটির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে বগুড়া-৬ (সদর) শূন্য আসনের নির্বাচনে দলের প্রার্থী করায় বিরোধীদের ক্ষোভ আরও চড়ে যায়। ভিপি সাইফুল ইসলামের অনুসারীরা আন্দোলনে নামলেও সফল হতে পারেননি। এই বিরোধ নিয়ে নির্বাচন করে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি প্রার্থী সিরাজ জয়ী হলেও ভোট পেয়েছেন মাত্র ৮৯ হাজার ৭৪২টি। ঠিক এর তিন মাস আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোট পান সোয়া ২ লাখ। এ আসন থেকে খালেদা জিয়া বরাবরই আরও বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাহলে বিএনপির বাকি ভোট গেল কোথায়? বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিরোধিতার কারণে বিএনপির প্রার্থী সিরাজ গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন। এর আগে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার দুটি আসন হাতছাড়া হয়ে যায়। বগুড়া-১ আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান ও বগুড়া-৫ আসনে হাবিবুর রহমান। বাকি পাঁচটি আসনে বিএনপি প্রার্থীরা বরাবরের মতো জয়ী হন। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় সব আসন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি আর জাসদের দখলে যায়। এতে এমপিশূন্য বিএনপি আরও নাজুক অবস্থায় পড়ে। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে দুটি আসনে আবারও তারা জয় পায়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসন বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৪ বিএনপি পুনরায় দখল করে।

এদিকে দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ধরে জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা ভিপি সাইফুল ইসলাম আহ্বায়ক কমিটিতে থাকলেও ১৫ মের পর থেকে এক ঘণ্টার জন্যও দলীয় কার্যালয়ে আসেননি। হয়ে আছেন নিজে থেকে নিষ্ক্রিয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ সত্ত্বেও সাইফুল ইসলামকে বগুড়া সদরের শূন্য আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কোনো প্রচার-প্রচারণায় দেখা যায়নি।

বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মাদ সিরাজ বলেন, বরং বিগত দিনের চেয়ে বগুড়ায় বিএনপির শক্তি এখন বেড়েছে। দলকে সুসংগঠিত করার কাজ চলছে। বগুড়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বিরোধীরা কোনো সুবিধা করতে পারবে না। বিএনপির ঘাঁটি কথাটি আগামীতেও অক্ষুণœ থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর