সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

জনসংখ্যার ১২% সংখ্যালঘু সরকারি চাকরিতে ২৫%

বিশেষ মতলবে এমন উদ্ভট অভিযোগ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

‘প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে যে অভিযোগ করেছেন তা একেবারেই মিথ্যা এবং বিশেষ মতলবে এমন উদ্ভট কথা বলেছেন। আমি এমন আচরণের নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীর ২৫% হচ্ছে ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু। যদিও মোট জনসংখ্যার ১২% হলেন সংখ্যালঘু’-এ কথা বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেওর উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য রেখেছেন সমাপনী সমাবেশে। সে সময় তিনি বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। মিয়ানমার জান্তার বর্বরতার শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানরা যখন বাঁচার তাগিদে বসতভিটা ত্যাগ করেন, সেই ১১ লক্ষাধিক অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। সে কারণে বিশ্বের সভ্য সমাজে বাংলাদেশের মহানুভবতার প্রশংসা উচ্চারিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে একই সম্মেলনে যোগদানকারী এনজিও কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার এমন অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীদেরও বিস্ময়ে হতবাক করেছে। খবর এনআরবি নিউজের। ড. এ কে মোমেন শুক্রবার বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনুষ্ঠিত বহুজাতিক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য শেষে লন্ডনের উদ্দেশ্যে বস্টন ত্যাগের প্রাক্কালে আরও বলেন, ‘ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতির আলোকপাত করেছেন। তাই প্রিয়া সাহার বক্তব্য যে অন্তঃসারশূন্য এবং বিশেষ উদ্দেশ্যে এমন জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের অভিযোগে প্রকারান্তরে শান্তিপূর্ণ সমাজে বিশৃঙ্খলা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তা কখনো হতে দেবে না। আশা করছি প্রিয়া সাহার বোধোদয় ঘটবে।’ ‘ইতিমধ্যেই অনেক প্রবাসী আমাকে ফোন করে প্রিয়া সাহার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঘুরে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন যাদের সহ্য হচ্ছে না সেই গোষ্ঠীর পারপাস সার্ভ করতেই এমন উদ্ভট প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে’-বলেও উল্লেখ করেন ড. মোমেন। এদিকে, প্রিয়া সাহাকে শুক্রবার সকালে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেও কথা বলেননি এ সংবাদদাতার সঙ্গে। লাইন কেটে দেওয়ার পর কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

টেক্সট মেসেজ দিলেও জবাব দেননি ২০ জুলাই নিউইয়র্ক সময় শনিবার ভোর রাত পর্যন্ত। তবে নিউইয়র্কে বসবাসরত তার ঘনিষ্ঠ স্বজনরা প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে কোনো মন্তব্য/প্রতিক্রিয়া না জানালেও নাম গোপন রাখার শর্তে শুধু বলেছেন যে, তার স্বামী মলয় সাহা দুদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তার দুই সন্তান লেখাপড়া করছেন আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট হিসেবে। প্রিয়া সাহা নিজেও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে স্বামীর গাড়িতে (সরকারি যানবাহন) এয়ারপোর্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। তাহলে তিনি নির্যাতিত বলে দাবি করলেন কীভাবে’।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক ‘হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন’র কর্মকর্তা জয় ক্যানসারার চেষ্টায় প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রে এই সম্মেলনে আসেন বলে জানার পর জয় ক্যানসারার মাধ্যমে প্রিয়া সাহার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার কর্মকর্তারা এ প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য/বিবৃতি দিতে চাননি। তবে ঐক্য পরিষদের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপারসন অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার এ সংবাদদাতাকে বলেছেন, ‘তার অভিযোগকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে না নিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বিরাজ করছে তা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের অপর গ্রুপের মুখপাত্র শিতাংশু গুহ একইভাবে বলেছেন, ‘প্রিয়া সাহা সঠিক কাজটি করেছেন। তিনি দুই কোটি সংখ্যালঘু’র মনের কথা বলেছেন।

প্রিয়া সাহার অভিযোগ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী বলেছেন, ‘ড. ইউনূস, বিচারপতি সিনহা, শিতাংশু গুহ ও প্রিয়া সাহা-এরা সবাই একই সূত্রে গাঁথা। এরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ষড়যন্ত্রকারী।’

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক খোরশেদ খন্দকার প্রচউদ্ভট-আজগুবি কথা বলেছেন।’

প্রিয়া সাহার ব্যাপারে ক্ষুব্ধ গোটা কমিউনিটি। সবাই এমন মিথ্যাচারের বিচার চেয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি ব্যাংক থেকে মোটা অর্থ পেয়েছেন লোন হিসেবে। সেই অর্থ যাতে পরিশোধ করতে না হয় সে ধরনের ক্ষেত্র প্রস্তুত এবং স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি লাভের (এসাইলাম) অভিপ্রায়ে এমন অভিযোগ করেছেন, যার কোনো সত্যতা পাওয়া যাবে না। ইতিমধ্যেই ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে প্রিয়া সাহার অভিযোগ যে সত্য নয় তা সবাই জেনেছেন।’ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের খোঁজখবর নিলে আরও অনেক রহস্য উদ্ঘাটিত হবে বলেও সংশ্লিষ্টরা বলাবলি করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর