মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

খাদের কিনারায় জাপার অস্তিত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

খাদের কিনারায় জাপার অস্তিত্ব

বগুড়ার রাজনৈতিক নেতাদের হিসাবে থাকলেও সাধারণ মানুষের মনে ভাটার টানে রয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের ওপর দলীয় কার্যালয়টি হকারদের পসরার কারণে যেন চাপা পড়েছে। রং উঠে যাওয়া সাইনবোর্ডের মতোই দলীয় কার্যক্রমেরও দৈন্যদশা। বিগত সংসদ নির্বাচনের পর তৃণমূলসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জাপার সাংগঠনিক কর্মকা- একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে। বিশেষ দিন ছাড়া কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ে না। দলীয় চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর এখনো কোনো স্মরণসভা হয়নি। দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হলেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না জেলা জাপার শীর্ষ নেতারা। সব মিলিয়ে ভালো যাচ্ছে না বগুড়া জেলা জাপার কার্যক্রম। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব, নবীন-প্রবীণ গ্রুপিং মিলিয়ে ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া জাপার অস্তিত্ব যেন খাদের কিনারায় এসে পৌঁছেছে বগুড়ায়। বগুড়ায় জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন হয়েছে ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল। ওই সম্মেলনের পর আজও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। যে কারণে দায়সারা আয়োজন করা হয় বিশেষ দিবসের কার্যক্রম। সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। জেলা কমিটির কোনো মিটিং হয় না। উপজেলা পর্যায়ে সংগঠনের খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। নানা কারণে দূরত্ব বেড়েছে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে। দলীয় কর্মীদের অভিযোগ, জেলা জাপা সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম ওমরের মধ্যে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তাদের মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ। দুই নেতায় কথা হয় না। দুজনেরই অধিকাংশ উপজেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নেই। এমপি হিসেবে যে উন্নয়নমূলক কর্মকা  তাতে অতীত এবং বর্তমানে সক্রিয় দেখা যায়নি নেতাদের। একই সঙ্গে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে  না থাকায় নেতা-কর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় বগুড়ায় অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে সদ্য প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের হাতেগড়া জাতীয় পার্টি।

২০১৪ সালের বিএনপি বিহীন নির্বাচনে জেলার ৭টি আসনের মধ্যে ৪টি আসন পায় জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির ইতিহাসে এটি দ্বিতীয়বারের মতো ৪টি আসনে এমপি পায় বগুড়া। ওই সময় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়। এতে করে আশায় বুক বাঁধে দলের শীর্ষ নেতা-কর্মীসহ তৃণমূলের কর্মীরা। কিন্তু তাদের সে আশায় গুড়ে বালি। দলের জেলা কমিটিসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। এদিকে বগুড়া জেলার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় নেতা-কর্মীরা এখনো এমপিদের উন্নয়ন কর্মকান্ডে  নেই। এবারের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া সদর ও বগুড়া-৭ হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ায় আরও বেকায়দায় পড়েছে জাতীয় পার্টি। ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচনে এমপি সংখ্যা ৪ থেকে কমে গিয়ে দুইয়ে দাঁড়িয়েছে। যে অবস্থা আগে ছিল এখনো সেই একই অবস্থা জাপার। বগুড়া সদর ও গাবতলী-শাজাহানপুর আসনে প্রার্থীর পরাজয় নতুন করে সংকটে ফেলেছে নেতা-কর্মীদের। জাপার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা অভিযোগের সুরে বলছেন, দলের স্বার্থে না, নিজেদের স্বার্থে কেউ কেউ এমপি হয়েছেন। যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বগুড়া-৬ সদর আসনে জয়ী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর ও বগুড়া-২ আসনের এমপি জেলা জাপার সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এলাকায় সংগঠন শক্তিশালী করতে কাজ করছেন। কাজ করে গেলেও এখনো ততটা শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি। সাংগঠনিক উন্নয়ন চোখে দেখার মতো শুধু বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী এইচ এম ইকবাল বিজয়ী হওয়া। এ ছাড়া আর কোনো সাংগঠনিক উন্নয়ন চোখে পড়েনি। এ ছাড়া বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) জেলা জাপার সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি। তবে জেলার কোনো কর্মসূচিতে তার দেখা মেলে না বলে নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। বগুড়া-২ আসনে জাপা সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর এলাকায় তিনি নিজে এবং তার ছেলে উপজেলা যুব সংহতির আহ্বায়ক হুসাইন শরীফ সঞ্চয় উন্নয়ন কর্মকা  দেখভাল করেন। তিনি, তার স্ত্রী ও সন্তান উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভাপতির পদ দখলে রেখেছেন। বগুড়া সদর উপজেলা, শিবগঞ্জ, সারিয়াকান্দি, দুপচাঁচিয়া ছাড়া অন্যান্য উপজেলা কমিটির নেতা-কর্মীরা প্রায় নিষ্ক্রিয়।

জেলা পর্যায়ে যুব সংহতি, জাতীয় ছাত্র সমাজ, স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ও শ্রমিক পার্টি বিভিন্ন দিবসে সক্রিয় রয়েছে। মহিলা পার্টির কোনো অস্তিত্ব নেই। জেলার রাজনীতিতে সাবেক ছাত্রনেতারা সক্রিয় থাকলেও জেলা কমিটির বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা নেতাদের দেখা মেলে না। পার্টি অফিসে তরুণ নেতা-কর্মীদেরই বেশি দেখা যায়।

বগুড়া জেলা জাপার সভাপতি ও বগুড়া-২ আসনের সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ জানান, জেলা জাপার সেক্রেটারির সঙ্গে কথা হয়। খুব দ্রুতই সাংগঠনিক মিটিং ডেকে দলের চেয়ারম্যানের শোক সভার বিষয়ে কর্মসূচি নেওয়া হবে।

বগুড়া জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম ওমর জানান, বগুড়া সদর এবং শহরে জাপার কার্যক্রম গতিশীল রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করতে শিগগির পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর