শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

জোটে বিলীন রাজশাহী জাতীয় পার্টি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীক নিয়ে রাজশাহী-৫ আসনে অধ্যাপক আবুল হোসেন, রাজশাহী-৬ আসনে ইকবাল হোসেন নির্বাচন করেছিলেন। এছাড়া ২০০১ সালের পর রাজশাহীর কোনো নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। স্থানীয় নেতারা বলছেন, প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হলেও জোটের কারণে শেষ পর্যন্ত তাদের নির্বাচনের মাঠে থাকা হয়নি। প্রতিবারই আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ছাড় দিতে হয়েছে। এই জোটের কারণে রাজশাহীতে ছন্নছাড়া জাতীয় পার্টি। জাপা নেতারা জানান, এক সময় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট আবদুল হাদী, দুরুল হুদা ও মেজবাহ উদ্দিন বাবলু। সেই দিন এখন সোনালি অতীত। মেজবাহ উদ্দিন বাবলু মারা গেছেন। অন্য দুজন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন শাহাবুদ্দিন বাচ্চু। গত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু ঋণ খেলাপির কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। নির্বাচনের পর অভিমানে দেশ ছাড়েন।  এখন সপরিবারে বসবাস করছেন আমেরিকায়। শাহাবুদ্দিন বাচ্চু জানান, ‘জোটের রাজনীতির কারণে বার বার আমরা আওয়ামী লীগকে ছাড় দিলাম। কিন্তু আমাকে রাজশাহী-৩ আসনে মহাজোট ছাড় দিল না। ঋণখেলাপি বলে আমার মনোনয়ন বাতিল করা হলো। যদিও আমি ঋণখেলাপি নই। কাগজপত্র দেখানোর পরেও আমার আপিল গ্রহণ হলো না।’ জোট জাতীয় পার্টিকে নিঃস্ব করে দেবে দাবি করে বাচ্চু বলেন, ‘এখনো সময় আছে, দলকে সংগঠিত করতে এককভাবে সব নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। তা না হলে লাঙল ভুলে যাবে মানুষ।’ বর্তমানে মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফর রহমান আর সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ডালিম। তারাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জোটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। দলের নেতারা মাঠে পরিশ্রম করছেন, ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্য প্রার্থীকে ছাড় দিতে হচ্ছে। এতে করে মাঠের দীর্ঘসময়ের পরিশ্রম করা নেতারা হতাশ। সেই হতাশা থেকে অনেকে দলের কর্মসূচিতেও আসতে চান না।’

জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা দাবি করেন, জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চু। তার কাজে খুশি হয়ে এক বছর আগেই দল থেকে রাজশাহী-৩ আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ওই আসন থেকে বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করে। এনিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। এনিয়ে জাতীয় পার্টির তিন শতাধিক নেতা-কর্মী পদত্যাগের হুমকি দিয়েছিলেন। রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি বদিউজ্জামান বদি জানান, পুরো জেলার নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নেন, কিন্তু দলের শীর্ষ নেতারা জোটের প্রার্থীকে ছাড় দিতে বলেন। এভাবে দীর্ঘ সময় রাজনীতির মাঠে লাঙল না থাকায় ছন্নছাড়া কর্মীরা। গোদাগাড়ী উপজেলার সভাপতি বরজাহান আলী পিন্টু, তানোর সভাপতি সামসুদ্দিন ম-ল, চারঘাটের সভাপতি আজিবার রহমান, সাধারণ সম্পাদক রায়হান আলী, পবার আহ্বায়ক মওলানা ইয়াকুব আলী, পুঠিয়ার সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদসহ বেশ কয়েকজন নেতা জানান, ২০০৮ সালের পর দল যেভাবে মাঠ ফাঁকা করে রেখেছে, আগামীতে এভাবে চলতে থাকলে কর্মীরাও থাকবে না।

জেলার সভাপতি অধ্যাপক আবুল হোসেন জানান, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল ওয়াশিউর রহমান দোলনকে মনোনয়ন দেয়। দলের পক্ষ থেকে কর্মীরা মাঠেও নেমেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দিতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আসে। এভাবে ২০০৮ সালের পর থেকে একরকম লাঙল ছাড়া রাজশাহী। যার প্রভাব পড়ছে তৃণমূলে। জোটের রাজনীতিতে থাকলেও দলের অস্তিত্ব ঠিক রাখতে আগামীর নির্বাচনগুলোতে মাঠে প্রার্থী রাখার পক্ষে এই নেতা।

সর্বশেষ খবর