শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মৃত্যুপুরী থেকে ফেরা অর্ধশতাধিক যুবকের অনিশ্চিত জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

অস্ট্রেলিয়া, কিউবা ও নিউক্যালেনিয়ায় উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুতে নিয়ে আটকে রাখার পর মৃত্যুপুরি থেকে দেশে ফিরে হতাশায় ভুগছেন বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১০১ জন যুবক। ভানুয়াতুতে প্রতারক চক্রের জিম্মিদশায় এবং সেখানকার সিআইডির হেফাজতে দেড় থেকে দুই বছর থাকার পর দেশে ফিরে প্রতারক চক্রের সদস্য শামসুল হককে হাতেনাতে আটক করলেও তাকে কৌশলে ছাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাবুগঞ্জ থানার ওসির বিরুদ্ধে। তবে বাবুগঞ্জ থানার ওসি দিবাকর চন্দ্র দাস বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা নয়, আপস চাইছেন। একজন লোককে আটকে রাখা হয়েছে- এমন অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে আগামী ৫ আগস্ট সংশ্লিষ্ট তিন উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে শালিস বৈঠকের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের একজন উজিরপুরের মুঙ্গাকাঠী গ্রামের ফরহাদ হোসেন খান জানান, দেশে তিনি বাবার ব্যবসা পরিচালনা করতেন। অস্ট্রেলিয়া, কিউবা ও নিউক্যালেনিয়ায় খাওয়াদাওয়া ফ্রি, মাসে ৫০ হাজার বেতন, দুই বছরের মধ্যে ওই দেশের পাসপোর্ট করিয়ে দেওয়াসহ উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখান বাবুগঞ্জের রাহুতকাঠীর হারুন-অর-রশিদ হাওলাদারের ছেলে এনামুল মাস্টার ও জসিম উদ্দিন। তাদের আরেক ভাই পলাশ হাওলাদার অস্ট্রেলিয়া থাকায় ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করেন। বরিশাল অঞ্চলের ২৬ জনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মোট ১০১ জন যুবক দালাল চক্রকে সর্বনিম্ন সাড়ে ১১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১৯ লাখ পর্যন্ত টাকা দেয় উন্নত দেশে যাওয়ার আশায়। ১০১ জন বিদেশগামী যুবকের কাছ থেকে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা নেন জসিম, তার স্ত্রী ও শ্বশুর। বিভিন্ন দলে ভাগ করে ১০১ যুবককে ভারত, সিঙ্গাপুর, ফিজি হয়ে দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুর রাজধানী পোর্টভিলায় নিয়ে আটকে রাখে প্রতারকরা। অভুক্ত রেখে নির্যাতনও করা হতো তাদের ওপর। গত বছর ২০ নভেম্বর সকালে তাদের উদ্ধার করে ভানুয়াতু সিআইডি। পরে আইওএমের সহায়তায় ২০ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত দেশে ফিরে আসেন প্রতারণার শিকার ৭৫ যুবক। এখনো সেখানে রয়েছেন ২৬ জন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অসুস্থ। এদিকে দেশে ফিরে যখন গভীর হতাশায় নিমজ্জিত প্রতারিত যুবকরা, সেই অবস্থায় ২১ জুলাই প্রতারকদের একজন জসিমের শ্বশুর মুলাদীর কাজী শামসুর রহমানকে বাবুগঞ্জের রাহুতকাঠীতে পেয়ে অবরুদ্ধ করে তারা। ওই দিন দেনদরবারের পর সন্ধ্যায় কৌশলে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান বাবুগঞ্জ থানার ওসি দিবাকর চন্দ্র দাস। থানায় নিয়ে উল্টো ওসি প্রতারিত যুবকদের অপহরণে অভিযুক্ত করে মামলা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত আমির হোসেন। মানব পাচারের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা শিকারপুরের আরেক যুবক জিয়াউল খান জানান, ওসি দিবাকর চন্দ্র দাস প্রতারক শামসুল হকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে তিন উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আগামী ৫ আগস্ট শালিস মীমাংসার কথা বলে কৌশলে তাকে চলে যেতে সহায়তা করেন। প্রতারক কাজী শামসুল হককে হাতের নাগালে পেয়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে না পারার আক্ষেপ করেন শিকারপুরের আরেক প্রতারিত যুবক মো. সজল। উজিরপুরের ইমরান নামে আরেক প্রতারিত যুবক জানান, মানব পাচার এবং প্রতারণার অভিযোগে বরিশালের বিমানবন্দর এবং টাঙ্গাইলের সখিপুর থানায় জসিম ও তার অন্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ ওই মামলায় শামসুল হককে অভিযুক্ত করতে পারত। কিন্তু পুলিশ আইনে সোপর্দ না করে শালিসের আশা দেখিয়ে শামসুলকে ছেড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর