রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাতের আঁধারে ফেলা দূষিত তেলে বিপন্ন হালদা নদী

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

রাতের আঁধারে ফেলা দূষিত তেলে বিপন্ন হালদা নদী

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার এগারোমাইল এলাকায় অবস্থিত ‘হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট’। এর প্রায় ৩০০ মিটার দূরেই আছে মরা ছড়া খাল। এ ছড়ার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। পরিশোধন ছাড়াই পিকিং পাওয়ার প্লান্টের পোড়া ফার্নেস তেল এ খালেই পড়ছে সরাসরি।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ রুহুল আমীন সোমবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে সরাসরি দূষিত কালো ফার্নেস তেল এ খালে পড়তে দেখেন। এরপর তিনি পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালককে চিঠিতে জানান, ‘হাটহাজারী পৌরসভাস্থ এগারোমাইল এলাকায় অবস্থিত ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত পোড়া ফার্নেস তেল নালার মাধ্যমে মরা ছড়া খালে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ খাল সরাসরি হালদার সঙ্গে সংযুক্ত।’ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদফতর এ ব্যাপারে ১৭ জুলাই শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য পাওয়ার  প্লান্টের ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দিয়েছে। ইউএনও মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ চাই, হালদা নদীও চাই। কিন্তু উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে এভাবে গলা টিপে হত্যা করার মতো দূষণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য নয়। তারা রাতের অন্ধকারে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হালদায় বর্জ্য ফেলছে। এ ব্যাপারে আমি পরিবেশ অধিদফতরকে চিঠি দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বর্জ্য শোধনাগার করার কথা থাকলেও তা না করে প্রতারণা করে আসছে। উল্টো তারা বৃষ্টি হলেই নানা কৌশলে তাদের বর্জ্য এ খালেই ফেলছে। এখন মনে হয় বৃষ্টি মানেই হালদায় বর্জ্য ফেলা।’ পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘কারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করা হয়নি অথবা বন্ধ হয়নি বা সঠিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে না বলে দূষিত বর্জ্য নির্গত হচ্ছে; যা পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তা ছাড়া কারখানার সৃষ্ট তরল বর্জ্য বাইপাস ড্রেনের মাধ্যমে নির্গত হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে ১৭ জুলাই সশরীরে হাজির হয়ে শুনানিতে অংশ নিতে বলেছি। পরে আমরা এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয় অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিশোধন ছাড়াই মরা ছড়ায় বর্জ্য ফেলে আসছে। এর আগে তাদের জরিমানাও করা হয়েছিল। তবু তারা দূষিত ফার্নেস অয়েল ছাড়ানো বন্ধ করেনি। অথচ এসব দূষিত তেল সরাসরি গিয়ে পড়ছে হালদা নদীতে।’ স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সব সময় বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে। বৃষ্টি হলেই কেন্দ্রের অপরিশোধিত বর্জ্য মরা ছড়ায় ফেলা হয়। এগুলো সরাসরি হালদায় পড়ছে। এভাবেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্যে দূষিত হয়ে চরম হুমকিতে পড়েছে হালদার জীববৈচিত্র্য। প্রসঙ্গত, এর আগেও হালদা নদীতে বর্জ্য ফেলায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। তা ছাড়া ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপককে সতর্ক করেছিল পরিবেশ অধিদফতর। তবু তারা বর্জ্য পরিশোধনার করেননি।

সর্বশেষ খবর