শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
যশোরের রাজনীতি

তরিকুলের মৃত্যুর পর এলোমেলো বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

তরিকুলের মৃত্যুর পর এলোমেলো বিএনপি

তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর এলোমেলো হয়ে পড়েছে যশোর বিএনপি। জেলার নেতৃত্ব নিয়ে দলটির মধ্যে গত কয়েক মাস ধরেই চলছে টানাপড়েন। সহজে এই সমস্যা মিটবে তেমন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না নেতা-কর্মীরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তরিকুল ইসলাম মন্ত্রীও হয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। পরিণত হয়েছিলেন জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে। পুরো খুলনা বিভাগে বিএনপির রাজনীতি পরিচালিত হতো তার ইশারায়। আর যশোর বিএনপিকে তো গত কয়েক দশক ধরে তিনি বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন। যশোর বিএনপিতে তাঁর কথাই ছিল শেষ কথা। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর ব্যক্তিত্ব দিয়ে যশোর বিএনপিকে বেঁধে রেখেছিলেন এক সুতোয়। ভিতরে ভিতরে কিছু অসন্তোষ, মন কষাকষি থাকলেও কখনো তা দানা বাঁধেনি। দীর্ঘদিন ধরে চাপা পড়ে থাকা অসন্তোষ প্রকাশ হতে শুরু করে তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর। তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর আগেই দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) হন তাঁর ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তরিকুল ইসলামের স্ত্রী নার্গিস বেগম যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি হতে চান বলে শোনা যায়। কিন্তু একই পদে আসতে চান তরিকুল ইসলামের ভাইপো যশোর নগর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলাম মারুফ। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তরিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ দেলোয়ার হোসেন খোকনের নাম শোনা যায়। কিন্তু এখানেও দলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু আবারও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এসব নেতা তাদের সমর্থনে গ্রুপিং শুরু করেন। এক পর্যায়ে কেন্দ্রের নির্দেশে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জয়ন্ত কুমার কু-ু যশোর জেলা বিএনপির নেতাদের নিয়ে মিটিং করেন। গত ২০ এপ্রিলের ওই মিটিংয়ে জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে ৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় তরিকুল ইসলামের স্ত্রী নারগিস বেগমকে। এ ছাড়া বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুকে সদস্য সচিব করা হয়। বলা হয়, এই আহ্বায়ক কমিটি তিন মাসের মধ্যে দলের আটটি উপজেলা ও পৌর ইউনিটগুলো পুনর্গঠন করে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠন করবে।

কিন্তু ইতিমধ্যেই সেই তিন মাস সময় পার হয়ে গেছে। এখনো আহ্বায়ক কমিটিই পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি তারা। হয়নি কোনো মিটিংও। পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে জেলার নেতারা এখন স্পষ্টভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কেন্দ্রে লবিং চালাচ্ছেন। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু যখন ৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করেন তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। সর্বশেষ সভাপতির স্বাক্ষরে সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক এই তালিকা কেন্দ্রে জমা দেবেন, এটাই নিয়ম। কিন্তু দেখা গেল, ওই ৫১ সদস্যের কমিটি থেকেই একজনের নাম বাদ দিয়ে এবং আরও পাঁচজনের নাম যোগ করে কমিটি পাস হয়ে গেল। এটা নিয়েই প্রতিবাদ।

 অথচ মধ্যস্থতা বৈঠকে ছয়জনের নাম চূড়ান্ত হয়েছে, যেখানে সাবু নিজে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে এবং আহ্বায়ক হিসেবে নার্গিস বেগম স্বাক্ষর করেছেন। সাবু নিজে ছয়জনের তালিকায় স্বাক্ষর করলেও এখন বলছেন পাঁচজনের কথা। কমিটির আহ্বায়ক নার্গিস বেগম বলেন, সমস্যা তেমন কিছু না। বড় দল, অনেক নেতা-কর্মী। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে গেলে কিছু মতপার্থক্য হয়। এগুলোর সমাধান হয়ে গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘যশোর বিএনপিতে যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল তা তারা নিজেরাই বসে সমাধান করেছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তারপরও যদি সমস্যা থেকে যায়, তখন আমরা দেখব’।

সর্বশেষ খবর