বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

দরপত্র ছাড়াই পণ্য আমদানি করতে পারবে টিসিবি

আপৎকালীন ক্রয়নীতিমালা শিথিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান টিসিবির জন্য ক্রয়নীতিমালা শিথিল করেছে সরকার। এখন থেকে আপৎকালীন স্থানীয় কিংবা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে কোনো ধরনের পূর্বানুমোদন কিংবা দরপত্র আহ্বানের প্রয়োজন হবে না। সরাসরি আমদানি কিংবা স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য কিনে চাহিদা মেটাতে পারবে টিসিবি। এত দিন বিভিন্ন উৎসব কিংবা ঈদে শুধু চিনি, ডাল, ভোজ্যতেল, ছোলা আর খেজুর ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করত সংস্থাটি। তাও এসব পণ্য সংগ্রহে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। এখন থেকে তার আর প্রয়োজন হবে না। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

গতকাল কমিটির আহ্বায়াক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘এ কেনাকাটায় কোনো আর্থিক সীমাবদ্ধতা নেই। তবে জাতীয়ভাবে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব জিনিস যেমন পিয়াজ, রসুন, আদা বা যে কোনো সময় যে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। হঠাৎ করে যেসব পণ্যে দাম বাড়বে তা টিসিবি যেখানেই পাক সেখান থেকেই কিনে চাহিদা মেটাতে পারবে। এর জন্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। এজন্য কোনো আইন পরিবর্তন করতে হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না। তৎক্ষণাৎ যেন চাহিদা মেটানো যায়, সেজন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনেক সময় বন্যার কারণে কিছু পণ্যের সরবরাহ কমে যায়। তখন এসব পণ্য আমদানি করতে হয় নয় তো অন্যভাবে সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক হয় সপ্তাহে এক দিন। এসব পণ্য কেনার অনুমতির জন্য এ কমিটিতে আসতে লেগে যাবে এক মাস। এজন্য টিসিবি কর্তৃপক্ষ বা মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা নিজেরাই প্রয়োজনে এসব পণ্য কিনতে পারবে।’ এ বৈঠকে স্পর্শকাতর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের অনুমোদন দিয়েছে ওই কমিটি।

 জাতীয় নিরাপত্তা আরও সুসংহত এবং যে কোনো ধরনের নাশকতা দমনে সক্ষমতা বাড়াতে একটি ভেহিক্যাল মাউন্টেড ডাটা ইন্টারসেপ্টর সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ সিস্টেমটি কেনার জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভেহিক্যাল মাউন্টেড ডাটা ইন্টারসেপ্টর কেনায় সায় দিয়েছে সরকার। এর আগেও একটি ভেহিক্যাল মাউন্টেড ডাটা ইন্টারফেইজ কেনায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি নিয়ে এর সংখ্যা দুটি হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৭৬(২)-এর উল্লিখিত আর্থিক সীমা শিথিল করাসহ ডিএমপি পদ্ধতিতে ক্রয় প্রস্তাব করা হয়েছে। যন্ত্রটির মূল্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী তা জানাতে চাননি। তবে সভার কার্যপত্রে যন্ত্রটি কেনায় আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

এতে ১ হাজার ২৭৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও চারটি ক্রয় প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, এ ছাড়া সরকারি ক্রয় কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বেলারুশিয়ান পটাশ কোম্পানি (বিপিসি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের ( বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ১০৮ কোটি ৯৯ লাখ ৯১ হাজার ২৫০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ধরা হয়েছে ২৯১ মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালের চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় চুক্তির শর্তসমূহ অভিন্ন রেখে ৮ জুলাই, ২০১৯-এ পুনরায় চুক্তি সম্পাদন করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করবে।

সর্বশেষ খবর