শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভাঙ্গা-কুয়াকাটা চার লেনের প্রক্রিয়া শুরু

রাহাত খান, বরিশাল

ভাঙ্গা-কুয়াকাটা চার লেনের প্রক্রিয়া শুরু

পরিবর্তনের হাওয়া আগেই লেগেছিল পদ্মার পশ্চিমপাড়ের একসময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলে। আর এই পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়ার দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে। পায়রা বন্দর ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার কথা চিন্তা করেই বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কের লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে এক্সট্রা ডোজ কেবল স্টেট পদ্ধতির নান্দনিক সেতু। এবার উন্নয়নের সেই পালকে যুক্ত হচ্ছে চার লেন মহাসড়ক। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী হয়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে ২৩৬.৭৪ কিলোমিটার চার লেন মহাসড়ক। চার লেন নির্মাণে মহাসড়কের দুই পাশে ৩০২.৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করছে সরকার। জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে ১ হাজার ৮৬৭.৮৫ কোটি টাকা প্রাক্কলনের মধ্যে চলতি অর্থবছর ৪৭০ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছে। এখন নিজ নিজ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ওই জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে সড়ক বিভাগ সূত্র। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের দাবি দীর্ঘদিনের। পায়রা সমুদ্রবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের সময় ধরে নেওয়া হয়েছিল চার লেন আসছে। সেই ঘোষণা এসেছে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিশাল জনসমাবেশে। ওই দিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরপরই ভাঙ্গা-কুয়াকাটা চার লেন মহাসড়ক নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়। ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদিত হয়। ২০ মে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের পরিচালক নিযুক্ত করা হয় সওজের বরিশাল বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহাকে। এ প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২৩৬.৭৪ কিলোমিটার মহাসড়কের দুই পাশে ৩০২.৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করবে সরকার। চার লেনের প্রথম ধাপ হিসেবে জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ হয়েছে ৪৭০ কোটি টাকা। বরিশাল সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, আগামী বছর ৩০ জুনের মধ্যে চার লেনের দুই পাশের জমি অধিগ্রহণের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য শিগগিরই সড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেবে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের যৌথ জরিপ দল সরেজমিন জমি অধিগ্রহণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে মূল্য নির্ধারণ করবে। পরে নিজ নিজ জেলা প্রশাসন তাদের ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করবে।

সড়ক বিভাগ আশা করছে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে চার লেন মহাসড়কের দুই পাশের জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেলে শুরু হবে মূল মহাসড়ক নির্মাণের কাজ। মূল চার লেনের ডিপিডি প্রক্রিয়াধীন। ড্রয়িং-ডিজাইনও চূড়ান্ত হচ্ছে।

বরিশাল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা জানান, ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে স্থানবিশেষ ৮০ থেকে ১২০ ফুট জমি সড়ক বিভাগের। বর্তমানে এই মহাসড়ক ২৪ ফুট প্রস্থ। নতুন চার লেনের প্রস্থ হবে ৪৮ ফুট। চার লেনের দুই পাশে থাকেব নন-মোটরাইজড সার্ভিস লেন। এ ছাড়া ফুটপাথও থাকবে দুই পাশে।

সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, ভাঙ্গা-কুয়াকাটা চার লেন মহাসড়ক নির্মাণে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়ন করতে চাইছে। দুই ধাপে এই চার লেন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১২৪ কিলোমিটার চার লেন নির্মিত হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে হবে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১১২.৭৪ কিলোমিটার চার লেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর