শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

গুছিয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ বিএনপিতে কোন্দল

পাহাড়ের রাজনীতি

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বদলে গেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির রাজনীতি। নতুন মেরুকরণ হয়েছে দলগুলোর রাজনৈতিক চিত্রে। ক্ষমতা ফিরে পেয়ে গুছিয়ে উঠেছে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ। সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারকে নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করেছে দলটি। তবে দিন দিন কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে জেলা বিএনপি। তাতেই ব্যাহত হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টি। দলের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্রিয় তারা। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। একই সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারে তৎপর হয়ে উঠেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও জনসংহতির বিদ্রোহী গ্রুপ এমএন লারমার (সংস্কারপন্থি) ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট।

বাংলাদেশে অন্য অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের চেয়ে ভিন্ন পার্বত্যাঞ্চলের রাজনৈতিক অঙ্গন। জাতীয় রাজনীতিতে ত্রিমুখী কর্মকা  থাকলেও পাহাড়ে রয়েছে চতুর্মুখী কর্মকা । তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান মিলে রয়েছে ১১ ভাষাভাষী ১৪টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি। তাই পাহাড়ে জাতীয় রাজনৈতিক দলের চেয়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা ও প্রভাব বেশি। তবুও নিজেদের লাগাম টেনে ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো।

আওয়ামী লীগ : রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর। সে সম্মেলনে গঠিত কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর। এতে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন দীপংকর তালুকদার। তিনি এখন সংসদ সদস্য। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মো. মুছা মাতব্বর। দলটির দাবি, অসাম্প্রদায়িক নেতৃত্বের ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দীপংকর তালুকদার রাঙামাটি জেলা আসন থেকে ১৯৯১, ৯৬ এবং গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও বিজয় ছিনিয়ে নেন দীপংকর তালুকদার। এরপর থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি। এতে আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারাতে হয় সংগঠনটির বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে। এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর বলেছেন, রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী।

বিএনপি : ঢিমেতালে চলছে রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম। এখনো রয়েছে পুরনো কমিটি। তাই অবস্থা খুব নড়বড়ে। অনেক চেষ্টা করেও উঠে দাঁড়াতে পারছে না সাংগঠনিকভাবে। নেতৃত্বের কোন্দলে দল ভেঙেছে বহুবার। এখনো রয়েছে গ্রুপিং। তাই দলীয় কার্যালয়ে নেই কোনো প্রাণচাঞ্চল্য। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনে মো. শাহ আলম সভাপতি, দীপন তালুকদার সাধারণ সম্পাদক এবং অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পনির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম ভুট্টো বলেছেন, জেলা বিএনপির কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ২ বছর।

জাতীয় পার্টি : দীর্ঘদিন স্থবির থাকার পর আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে রাঙামাটি জেলা জাতীয় পার্টি। গঠন করা হয়েছে আহ্বায়ক কমিটি। দলকে শক্তিশালী করতে তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে সংগঠনটির। রাঙামাটি জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। সে সময় সভাপতি নির্বাচিত হন মো. শাহাজাহান মোল্লা। আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয় প্রদেশ চাকমা। কিন্তু দল গোছানোর আগেই একই বছরের নভেম্বরে মারা যান সভাপতি শাহাজাহান মোল্লা। সেই থেকে স্থবির হয়ে পড়ে সংগঠনটির সব কার্যক্রম। তবে চলতি বছরের জুন মাসে অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদারকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটির অনুমোদন দেন সংগঠনটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। এতে সদস্য সচিব করা হয় জ্যোতি বিকাশ চাকমাকে। এ কমিটির সদস্য করা হয় প্রায় ৭৭ জনকে। এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক পারভেজ তালুকদার বলেন, এ কমিটিতে দায়িত্ব পাওয়ার পর সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি : পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রধান আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি। শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়েই প্রকাশ্য রাজনীতিতে চলে আসে জনসংহতি সমিতি। তার আগে দীর্ঘ প্রায় দুই দশকেরও অধিক সময় সশস্ত্র আন্দোলন চালায়। ১৯৭২ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। জনসংহতি সমিতির নবম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১০ সালের মার্চে। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি পুনর্নির্বাচিত হন। গঠিত হয় ২৭ সদস্যবিশিষ্ট ১০ম কেন্দ্রীয় কমিটি। পার্বত্য চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে দলটি।

কিন্তু সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে দলটি।

ইউপিডিএফ : পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে প্রসিত খীসার নেতৃত্বে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্য আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে অব্যাহত কর্মসূচিসহ জুম্ম জনগণের বিভিন্ন অধিকার আদায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলায় রয়েছে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিদ্রোহী গ্রুপ এমএন লারমার (সংস্কারপন্থি) চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফকে সঙ্গে নিয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর