সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

কনটেইনার গায়েব তদন্ত কোন পথে

চট্টগ্রাম বন্দরে তদন্ত নিয়ে রশি টানাটানি, সমন্বয়হীনতা । উপেক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও

রুহুল আমিন রাসেল, ঢাকা ও ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

কনটেইনার গায়েব তদন্ত কোন পথে

চট্টগ্রাম বন্দরে ২৯৫টি কনটেইনার গায়েবের ঘটনা তদন্তে চলছে রশি টানাটানি। বহুল আলোচিত এ ঘটনা তদন্তে ঢিলেমি ও সমন্বয়হীনতার খবর পাওয়া গেছে। উপেক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনাও। গঠিত হয়নি বন্দর ও কাস্টমসের যৌথ তদন্ত কমিটি। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, কনটেইনার গায়েবের দায় নেব না, নথির ভুলের কারণে কনটেইনার খুঁজে পাচ্ছে না কাস্টমস। আর কাস্টমস বলছে, তদন্তে কোনো কূলকিনারা পাওয়া যাচ্ছে না, এমন কথা বলার সময় হয়নি। জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যবাহী ২৯৫টি কনটেইনার গায়েব হওয়ার ঘটনায় গত ২৭ জানুয়ারি ১৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। সংস্থাটির যুগ্ম কমিশনার নাহিদ নওশাদ মুকুলকে আহ্বায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আছেন আরেক যুগ্ম কমিশনার এইচ এম শরিফুল হাসান। গতকাল নাহিদ নওশাদ মুকুলের কাছে তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তদন্ত কাজ এখনো তার পর্যায়ে আসেনি। আর এইচ এম শরিফুল হাসান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৯৫টি কনটেইনার গায়েবের যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা সঠিক নয়। এটা আরও কম-বেশি হবে। ফলে নতুন করে আবার তদন্ত শুরু করেছি। বন্দর নিজেদের মতো করে তদন্ত করছে। কাস্টমসের তদন্তে আরও সময় লাগবে। আর তদন্তে কনটেইনার গায়েবের কূলকিনারা পাওয়া যাচ্ছে না, সে কথা বলার সময় এখনো আসেনি।  তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ-চবক সচিব ম. ওমর ফারুক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওই কনটেইনারগুলোর কোথায় কী অবস্থান, তা কাস্টমসকে দেওয়া চিঠিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছে চবক। এতে বন্দরের আর কোনো দায় থাকে না। যে কনটেইনার পাওয়া যাচ্ছে না, সেগুলো অবশ্যই আছে। এগুলো ম্যাচের বাক্স না যে হারিয়ে যাবে। কাস্টমসের নথির ভুলের কারণে কনটেইনারগুলো খুঁজে বের করা সম্ভব হচ্ছে না।  জানা গেছে, কিছু দিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের একটি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে কনটেইনার গায়েব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের কথা উঠলেও তা এখনো হয়নি। বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের ধারণা, এতগুলো কনটেইনার গায়েব হতে পারে না। ২৯৫টি কনটেইনারের অধিকাংশই নথিপত্রের ত্রুটিজনিত কারণে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এগুলো বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডেই হয়তো আছে। এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদন গত ২১ মার্চ চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসকে দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ-চবক। এ প্রতিবেদনে বলা হয়, কনটেইনারের তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে চবক। অধিকাংশ কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। কিছু কনটেইনার অকশন করা হয়েছে এবং পণ্য খালাস হয়েছে। বাকি কনটেইনার কাস্টমসের নিলাম শাখায় হস্তান্তর করা হয়েছে।  ফলে কনটেইনারগুলোর অবস্থান সম্পর্কে চট্টগ্রাম কাস্টমস অবগত। তাই পরবর্তীতে এ ধরনের কোনো তথ্য চেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না ফেলার জন্য অনুরোধ করছে চবক। এর আগে বিগত ১/১১ সরকারের আমলে দুই হাজার কনটেইনারের হদিস না পাওয়ার অভিযোগ কাস্টমস তুলেছিল চবকের বিরুদ্ধে। তখনো সেই কনটেইনার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন টাস্কফোর্সের কাছে।  এদিকে কনটেইনার গায়েবের ঘটনায় দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে গত ২২ মে চিঠি দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ চিঠিতে বলা হয়, কাস্টমসের কাছ থেকে পণ্যের বিল অব লোডিংয়ের বিপরীতে ২৯৫টি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থান করছে। অথচ আমদানিকারকরা ওই কনটেইনারগুলো খালাসের কোনো বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেনি। ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ৮১টি কনটেইনার পণ্য জাহাজে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ৮১টি কনটেইনার পণ্য কেন ফেরত গেল, সেই কারণ জানার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে পুনরায় চিঠি দেওয়া হোক। ওই চিঠিতে বলা হয়, চবক ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় না থাকা এবং মাসিক কোনো সভা না হওয়ার কারণে এই সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। নথিতে থাকলেও বন্দর থেকে কনটেইনার গায়েবের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই কনটেইনার গায়েবের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই চিঠিতে।

সর্বশেষ খবর