শিরোনাম
সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
পুরান ঢাকার একাল-সেকাল

মুঘল স্থাপত্যের হিঙ্গা বিবি নেই!

মাহবুব মমতাজী

মুঘল স্থাপত্যের হিঙ্গা বিবি নেই!

সুদৃশ্য কারুকাজ খচিত তিনটি গম্বুজ। ভিতরের দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন অলঙ্করণ। সামনে বারান্দা আর অজুখানা। নির্মাণশৈলীতে মুঘল স্থাপত্যরীতির পূর্ণ প্রকাশ। এটি হিঙ্গা বিবি মসজিদের আগের চিত্র। পুরান ঢাকার আরমানিটোলার কে পি ঘোষ রোডে এর অবস্থান। এই মুঘল ঐতিহ্য এখন আর নেই। সব চিহ্ন প্রায় ধূলিসাৎ। তিনটি গম্বুজের দুটি নিশ্চিহ্ন। তৃতীয়টিও আধভাঙা। কে পি ঘোষ রোডের ৯৭-৯৮-৯৯ হোল্ডিং নম্বরের হিঙ্গা বিবি মসজিদটিতে শিলালিপি না থাকায় জানা যায়নি প্রতিষ্ঠার সময়। তবে স্থাপত্যরীতি দেখে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি মুঘল আমলে নির্মিত। সেই হিসেবে বয়স ৩০০ বছরের বেশি। ঢাকায় সেই সময়ের বাসিন্দা কোনো এক হিঙ্গা বিবি মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করে ৩১ কাঠা জায়গাসহ এটি ওয়াকফ করে যান। দখল-বেদখল হয়ে জমি আছে এখন প্রায় ছয় কাঠা। মসজিদের নামটিও বদলে দিয়ে নাম রাখা হয়েছে ‘মাওলানা জামে মসজিদ’। 

পুরনো মসজিদে মুসল্লিদের জায়গা হয় না। বহুদিন সংস্কার না করায় ভিতর থেকে সুরকি, পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদও ধসে পড়ার আশঙ্কায়। এসব কারণ দেখিয়ে মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটি ৫ বছর আগে সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে। তবে তা ঐতিহ্য অক্ষুণœ রেখে নয়, বরং ভেঙে ফেলে। মসজিদের সামনের দোকানদার আবদুল জব্বার বলেন, বাস্তব প্রয়োজনেই পুরনো মসজিদটি রাখা হয়নি। দুটি সারিতে ৪০-৫০ জনের মতো মুসল্লি নামাজে দাঁড়াতে পারতেন। মসজিদ তো নামাজের জন্য। যদি নামাজই আদায় করা না যায়, তবে সেই ভবন রাখার সার্থকতা কী? আর মসজিদ ভেঙে তো তারা মসজিদই করেছেন। ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই পুরনো মসজিদটি ভেঙে নতুনভাবে করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াকফ কার্যালয়ে হিঙ্গা বিবি ওয়াকফ স্টেটের ফাইলে ১৯৭২ সালের আগের কোনো কাগজপত্র নেই। সবচেয়ে পুরনো নথিটি ১৯৭২ সালের ১০ মের। দ্বিতীয় দফা নথিতে মসজিদের সম্পত্তির পরিমাণ ১৬ শতাংশের কিছু বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। পুরনো মসজিদটি আগের মতোই রেখে বাইরের সম্প্রসারিত জায়গায় আরও সম্প্রসারিত করার জন্য মসজিদ কমিটির সঙ্গে কথাও বলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তারা ভাঙা মসজিদটি আগের অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডিজাইনও করেছিল।

বর্তমান চিত্র : ৬ কাঠার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৫ তলা মসজিদ। চারতলা পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে, পঞ্চম তলায় রয়েছে টিনশেড। মসজিদের সামনে ও পাশে বেশ খানিকটা জায়গাও আছে। সেখানে অন্তত ২১টি দোকান ও একটি তিনতলা বাড়ি। 

জানা গেছে, ৪০০ বছরের প্রাচীন নিদর্শন বলতে এই শহরে এখন আছে লালবাগ কেল্লা আর ৮-১০টি মসজিদ। আগে মুঘল আমলের মসজিদ ছিল ৩০টির বেশি।

সর্বশেষ খবর