শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

খুলনায় এলপি গ্যাসের অবৈধ ক্রস ফিলিং ব্যবসা

সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনা মহানগরীতে অক্সিজেন কোম্পানির আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এলপি গ্যাসের অবৈধ ‘ক্রস ফিলিং’ ব্যবসা (অবৈধভাবে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা)। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহকরা। সেই সঙ্গে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। মহানগরীর রূপসা মতিয়াখালী এলাকায় খুলনা অক্সিজেন কোম্পানি লিমিটেডে দীর্ঘদিন ধরেই বসুন্ধরাসহ একাধিক ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাসের খালি সিলিন্ডার মজুদ রেখে তাতে এলপি গ্যাস ভর্তি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, খুলনা অক্সিজেন কোম্পানির ভিতরে আলাদা টিনশেডে বসুন্ধরাসহ ৯টি এলপি গ্যাস কোম্পানির কয়েক হাজার খালি সিলিন্ডার মজুদ রাখা হয়েছে। এখানে রয়েছে এলপি গ্যাসের রিজার্ভার ট্যাংক ও সিলিন্ডারে এলপি গ্যাস রিফিল করার আধুনিক যন্ত্রপাতি ও লোড ট্যাংক। জানা যায়, খুলনা অক্সিজেন লিমিটেডের মালিকানাধীন অপর প্রতিষ্ঠান সুপার গ্যাস লিমিটেডকে          ঢাকার গাজীপুরে এলপি গ্যাস বোতলিং প্লান্ট করার প্রাথমিক অনুমতি দিয়েছে বিস্ফোরক অধিদফতর। তবে এখনো প্রতিষ্ঠানটি চূড়ান্ত অনুমতি পায়নি। কিন্তু সুপার গ্যাস অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে বিপজ্জনকভাবে ঘনবসতিপূর্ণ খুলনা শহরের মধ্যে তাদের অক্সিজেন কোম্পানিতে এলপি গ্যাস ফিলিং ও বাজারজাত করছে। এ বিষয়ে বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক মো. সামসুল আলম বলেন, খুলনা শহরে এলপি গ্যাস রিফিল করার সুযোগ নেই। এই অনুমোদন কোনো প্রতিষ্ঠানকেই দেওয়া হয়নি। সুপার গ্যাস লিমিটেডের এলপি গ্যাস বোতলিং প্লান্টের প্রাথমিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে ঢাকার গাজীপুরে। তাদের খুলনায় ফিলিং করার কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। চূড়ান্ত অনুমোদন না থাকায় এই মুহূর্তে তারা গাজীপুরেও ফিলিং করতে পারবে না। খুলনা অক্সিজেন কোম্পানীতে ফিলিং করলে তা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ। বিষয়টি জানাজানি হলে গত বুধবার রাতের আঁধারে ও গতকাল দুপুর পর্যন্ত খুলনা অক্সিজেন কোম্পানির ভিতরে মজুদ থাকা কয়েক হাজার খালি ও ভরা সিলিন্ডার ট্রাকে করে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখানে ক্রস ফিলিংয়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারে কম গ্যাস ভর্তি করে বাজারজাত করা হতো। এতে প্রতি সিলিন্ডারে প্রায় ২০০-৩০০ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। বাজারে প্রচলিত বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন কোম্পানির ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাসের বর্তমান পাইকারি মূল্য (ডিও) ৮৭০ টাকা। কিন্তু গ্যাস কম দেওয়া সিলিন্ডারগুলো ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি করেও তারা মোটা অঙ্কের মুনাফা করছে। পরিবেশবিদরা জানান, এ ধরনের ফিলিং প্রক্রিয়া যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি এদের গ্যাসের ব্যবহারও চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বৈধ কোম্পানিগুলো স্বয়ংক্রিয় আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এলপি গ্যাস বাজারজাত করে। আর চক্রটি এটি করছে যেনতেন প্রক্রিয়ায়। ফলে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা।

এ বিষয়ে জানাতে চাইলে এলপি গ্যাস অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবকমিটির কনভেনর ইঞ্জিনিয়ার জাকারিয়া জালাল বলেন, এলপি গ্যাস ও অক্সিজেনের মিশ্রণ দায্যতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। অক্সিজেন উৎপাদন কারখানার মধ্যে এলপি গ্যাসের মজুদ বা বোতলজাতকরণ মহাবিপজ্জনক। যাতে বড় ধরনের অগ্নিকা  ঘটতে পারে। এ ধরনের অবৈধ কর্মকান্ডে র সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা খুবই জরুরি।

এলপি গ্যাসের অবৈধ ক্রস ফিলিং ব্যবসার কথা অস্বীকার করে খুলনা অক্সিজেন কোম্পানির পরিচালক মাশ্সু ববি বলেন, আমরা ‘সিলিন্ডার এক্সচেঞ্জ’-এর ব্যবসা করি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খালি সিলিন্ডার মজুদ রাখা হয়। যা ডিলাররা চেঞ্জিং মানির বিনিময়ে নিয়ে যায়। তবে এখানে এলপি গ্যাস বোতলজাত করার মেশিনারিজ ও রিজার্ভার ট্যাংক কেন স্থাপন করা হয়েছে তার সদুত্তর দেননি তিনি।

সর্বশেষ খবর