শিরোনাম
রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
আদালতে গ্রেফতারদের স্বীকারোক্তি

যাত্রীবেশে বাসে ডাকাতি

মাহবুব মমতাজী

‘গাবতলী, গাবতলী’ বলে ডাকছিল রবরব পরিবহন নামে বাসের হেলপার। তখন বাজে রাত প্রায় ৩টা। এ সময় বাসটি রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের ওপর দাঁড়ানো ছিল। ঘটনাটি গত ১০ আগস্টের।

রবরব পরিবহনের বাসগুলো ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে গাবতলী পর্যন্ত চলাচল করে থাকে। কয়েক দিন আগে কোরবানির ১০টি ষাঁড় গরু মাগুরার হরিনদী থেকে এনে আফতাবনগর হাটে তোলেন খলিলুর রহমান (৪৩) নামে এক বেপারি। এদিন বিক্রি শেষে বাড়ি ফেরার জন্য গাবতলী টার্মিনালে বাস ধরতে হাট থেকে বের হন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তার ভাই সেলিম, ভাগ্নে আবদুল্লাহ আল ইমাম পুষ্পসহ আরও কয়েকজন। হাট থেকে বেরিয়ে গাবতলী যেতে রামপুরা ব্রিজে গেলে হেলপারের ডাক শুনে ওই লোকাল বাসে উঠে বসেন তারা। ওঠার পর বাসটি কিছু দূর যেতেই যাত্রী বেশে থাকা ডাকাতের ফাঁদে পড়েন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।

এ ঘটনায় গত ১১ আগস্ট রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বাসটিকে চিহ্নিত করে পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করে তদন্তের দায়িত্বে থাকা এসআই আলী হাসান ও হাসান মাসুদ।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, গত ১৪ আগস্ট দারুস সালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে গাড়ির মালিক মনির হোসেন ও চালক পারভেজকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাদের আদালতে হাজির করা হলে দুজনই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত ২০ আগস্ট ওই ডাকাত দলের হোতা হোসেনকে চুয়াডাঙ্গা থেকে এবং পরদিন ঢাকার আদাবর থেকে তার সহযোগী জসিমকে গ্রেফতার করা হয়। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। গ্রেফতার অভিযানে তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ২ লাখ ২০ হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়। ঘটনার দিন গরুর বেপারিরা রবরব পরিবহনের ওই বাসে ওঠার সময় আগে থেকে অপরিচিত ১২-১৫ জন লোককে বসা দেখতে পান। রামপুরা ব্রিজ থেকে ছাড়ার প্রায় ২০ মিনিট পর বাসটি কুড়িল বিশ্বরোডে পৌঁছায়। সেখানে ফ্লাইওভারে ওঠার পরই আগে থেকে বাসের সিটে বসে থাকা লোকেরা চাপাতি, ছুরি, ডেগার বের করে তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় তারা বলেন ‘আমরা ডাকাত, কেউ কোনো প্রকার আওয়াজ করবি না, তাহলে গুলি করে মেরে ফেলব।’ এ কথা বলেই কয়েকজন মিলে বেধম কিল-ঘুষি মারা শুরু করে। একপর্যায়ে হাত-চোখ বেঁধে গাড়ির ভিতরে উপুড় করে শুইয়ে রাখে। তখনো লাথি, কিল ও ঘুষি মারতে থাকে ডাকাতরা। এর পর খলিলের কাছে থাকা গরু বিক্রির ৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা ও একটি মোবাইলফোন সেট, তার ভাই সেলিমের ৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা ও একটি মোবাইলফোন, তাদের সঙ্গে থাকা রফিক মোল্লার ৬৮ হাজার টাকা, খলিলের ভাগিনা পুষ্পর ৬০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল এবং রাখাল নাসির ও মনোয়ারের কাছে থাকা কিছু টাকাও হাতিয়ে নেয় তারা। এমনকি তাদের সঙ্গে থাকা কাপড়ের ছয়টি ব্যাগও নিয়ে যায়। এরপর তাদের বাসে বিভিন্ন স্থানে ঘুরানোর পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মিরপুর কালশী নিয়ে ফেলে দেয়। সেখানে চিৎকার শুনে পল্লবী থানার একটি মোবাইল গাড়ি ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গাড়ির মালিক মনির হোসেন ও চালক পারভেজ জানিয়েছেন, ডাকাত দলের হোতা হোসেন দুই দিনের জন্য এক লাখ টাকায় বাসটি ভাড়া করেছিল। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হোসেন তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, সে প্রতি কোরবানির মৌসুমে গরুর বেপারিদের টার্গেট করে ডাকাতি করে থাকে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর