শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিচারক সংকটে চট্টগ্রামের আদালত

ঝুলছে দুই লাখ মামলা, ভোগান্তিতে বিচারপ্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বিচারক সংকটে পড়েছে চট্টগ্রামের আদালতগুলো। সংকটের কারণে ২ লাখ মামলা ঝুলে আছে। এতে ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। বিচার শেষ না হওয়ায় দিনের পর দিন বিভিন্ন আদালতে মামলার পাহাড় গড়ে উঠছে। হচ্ছে মামলাজটও।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ৯০টি আদালতে ঝুলছে ২ লাখের ওপরে মামলা। এর মধ্যে ২০টিতে রয়েছে বিচারক সংকট। বিচারক সংকটে দিনের পর দিন শুধুই মামলার নতুন তারিখ পড়ছে। প্রতিটি আদালতে বাড়ছে মামলা। ফলে বিচারপ্রার্থীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে আদালতপাড়ায় সময় পার করছেন। তবে এই বিচারক সংকটের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট, চট্টগ্রামের আদালতপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক আলোচনা হলেও কোনোভাবেই সুরাহা হচ্ছে না অদৃশ্য কারণে। উচ্চপর্যায়সহ সবখানে বিচারক সংকটের কথা বলা হলেও এর সুরাহা কবে নাগাদ হবেÑ আদৌ কেউ বলতে পারছেন না বলে জানান ভুক্তভোগী আবদুল করিমসহ একাধিক বিচারপ্রার্থী। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক নেতা ও সংগঠক অ্যাডভোকেট মোস্তফা ইমরান সোহেল বলেন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালসহ ২০টি আদালতে দীর্ঘদিন ধরেই বিচারক সংকটের কারণে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির মধ্যে আছেন। প্রতিদিন জেলা-উপজেলার দূরদূরান্ত থেকে অর্থ ও সময় নষ্ট করে ব্যক্তিগত মামলার কার্যক্রম শেষ করতে এলেও এর সমাধান না হয়ে শুধু মামলার তারিখ নিয়েই তাদের ফের গ্রামে যেতে হচ্ছে। এতে মামলাজটের পাশাপাশি ন্যায়বিচার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারক নিয়োগ না দিলে মামলার জট দিন দিন বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।

 

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আইয়ুব খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রামের ২০ আদালতেই রয়েছে বিচারক সংকট। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য উচ্চপর্যায়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি। এ কারণে ধীরে ধীরে মামলার স্তূপের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তা ছাড়া সংকট কাটাতে নানাভাবে কাজও করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, নগর ও জেলা মিলিয়ে ৯০টি আদালতে ২ লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন আছে। এর মধ্যে ২০টি আদালতে দীর্ঘদিন বিচারক নেই। এ কারণে বিচারপ্রার্থীদের যেমন সময় ব্যয় হচ্ছে; তেমনি অর্থের অপচয়ও ঘটছে। তিনি বলেন, একজন বিচারপ্রার্থী মামলার কোনো ধরনের সুরাহা না হওয়ায় একটি মামলার জন্য ১০ বছর কিংবা ২০ বছর আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এমন ঘটনাও আছে। এ ছাড়া অনেকেই বিচার শেষ না হওয়ার কারণে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। বছরের পর বছর বিভিন্ন মামলা আটকে থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে চট্টগ্রাম বিভাগের দুর্নীতি ও চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বর্তমানে এ আদালতে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ৭০০-এর মতো। এ আদালতে ৭ জানুয়ারি বিচারক বদলি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত শূন্যপদ পূরণ হয়নি।

বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেও একই চিত্র। এ আদালতেও চাঞ্চল্যকরসহ ১০০-এর বেশি মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অন্যত্র বদলির পর একজনকে নিয়োগ দিলেও যোগ দেননি তিনি। গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর আরেকজন বিচারককে নিয়োগ দেওয়ার পর মাত্র দুই মাসের মাথায় তিনিও বদলি হয়ে যান। এভাবে একইভাবে চট্টগ্রামের আরও প্রায় ১৮টি আদালতে রয়েছে বিচারক সংকট। এর মধ্যে জেলা জজশিপের অধীনে দেউলিয়া আদালত, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, সন্দ্বীপের সিনিয়র সহকারী জজ, পটিয়া চৌকির আওতাধীন চন্দনাইশ আদালতের সহকারী জজ, পটিয়া চৌকির অতিরিক্ত আদালতের সহকারী জজ, সাতকানিয়া চৌকির অতিরিক্ত আদালতের সহকারী জজ, সাতকানিয়া চৌকির লোহাগড়া আদালতের সহকারী জজ, বাঁশখালী চৌকির সহকারী জজ আদালতগুলোয় রয়েছে বিচারক সংকট। অন্যদিকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীন দ্বিতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক সংকট রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর