মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক ইসি

চট্টগ্রাম ইসির কর্মচারী শনাক্ত ♦ খোঁজা হচ্ছে জালিয়াত চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক ইসি

রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে ‘মরিয়া’ পরিস্থিতির মধ্যে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদের নিবন্ধন কাজে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই সঙ্গে দেশের সব উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসের সার্ভারের বিদ্যমান পাসওয়ার্ড ও কোড নম্বর পরিবর্তন করে নতুন ‘সিকিউরিটি ফিচারস’ সন্নিবেশ করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার তৎপরতার মধ্যে সম্প্রতি চট্টগ্রামে নারী রোহিঙ্গার জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ ও অর্ধশতাধিক নাগরিকের তথ্যে অসঙ্গতি ধরা পড়ার পর এ উদ্যোগ নেওয়া হলো। এদিকে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার অপেচষ্টায় চট্টগ্রামে একজন পিয়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান। গতকাল বিকালে রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে অপতৎপরতা রোধে সার্বিক বিষয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রেস ব্রিফিং করেন তিনি। অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘জয়নাল আবেদীন নামে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের একজন পিয়ন রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অপচেষ্টায় জড়িত ছিলেন প্রাথমিক তদন্তে এমন বিষয় উঠে এসেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা ফৌজদারি ও বিভাগীয় মামলা দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ অন্যদের সম্পৃক্ততাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মোখলেসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা সেটিও আমরা দেখছি। ভোটার করতে পারেনি, আইডি দিতে পারেনি, অ্যাটেম্পট নিয়েছে, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনোভাবেই যাতে আইডি কার্ড না পায় সে জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারা (রোহিঙ্গা) ভোটার হতে পারবে না।’ চট্টগ্রামে রোহিঙ্গা নারীর ভুয়া এনআইডি সংগ্রহ ও রোহিঙ্গা সন্দেহে অন্তত অর্ধশত নাগরিকের     

তথ্য নিবন্ধন আটকে দেওয়ার পর চলমান তদন্তের মধ্যে এ তথ্য জানালেন ইসির এ কর্মকর্তা। সকালে একজন নির্বাচন কমিশনার রোহিঙ্গাদের এনআইডি দেওয়ায় ইসি কর্মী জড়িত নয় দাবি করলেও বিকালে ইসির প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্টো চিত্র পাওয়া গেল। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ও ইসির যুগ্ম-সচিব এনআউডি পরিচালক আবদুল বাতেন উপস্থিত ছিলেন। এনআইডি উইং মহাপরিচালক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সচেতন। কোনো রোহিঙ্গা বা বিদেশিকে অন্তর্ভুক্ত হতে দেব না। যে স্ট্যাটাসের হোক, যে সংগঠনের হোক অপচেষ্টাকারীর বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা  নেব।’ তিনি জানান, বাংলাদেশে আসা ১১ লাখ ২২ হাজার রোহিঙ্গার আঙ্গুলের ছাপ ও তথ্য নিয়ে রোহিঙ্গা সার্ভার প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন কেউ চাইলেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার অপচেষ্টার প্রবণতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় বিশেষ কার্যক্রম শেষ করে সার্ভারে তথ্য আপলোড করা হয়। এরপর ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করে যারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য, কেবল তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখন যাদের তথ্য নেওয়া হচ্ছে, তাদের আঙ্গুলের ছাপ ও তথ্য প্রথমেই রোহিঙ্গা সার্ভারে ম্যাচ করে দেখা হচ্ছে। কারও তথ্য এই সার্ভারে ম্যাচ করলে মূল সার্ভারে আর যাওয়ার দরকার হবে না। এছাড়া খসড়া প্রকাশের আগে আমরা ম্যাচ করব। কাজেই তারা ভোটার হতে পারবে না।’

সার্ভারে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা : এনআইডি উইংয়ের কর্মকর্তারা জানান, জালিয়াতি বন্ধ ও রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে ৫১৮টি থানা/উপজেলা অফিসের সার্ভারের পাসওয়ার্ড ও কোড নম্বর পাল্টে ফেলা হয়েছে। এতে নতুন ভোটারদের তথ্য আপলোডের বিষয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে। অন্যদিকে ইসি সচিব মো. আলমগীর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, সারা দেশে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ভোটার নিবন্ধন করা হবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ‘বিশেষ এলাকায়’ নিবন্ধনের জন্য পাওয়া আবেদনগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই, অনুসন্ধান ও পরিদর্শনের পর নিবন্ধন কেন্দ্রে ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের ছবি তোলা ও আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করা হবে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটিসহ ৩২ উপজেলার ‘বিশেষ এলাকা’র সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের টিম রয়েছে। নিবন্ধন কাজে রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে ইসি। তবু রোহিঙ্গারা বিভিন্ন কৌশলে ভোটার হওয়ার জন্য নানারকম অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ আসছে। এ অপচেষ্টা রোধে ইসি মাঠ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা দিতে নির্দেশনা দিয়ে বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে। ইসির উপসচিব আবদুল হালিম খান বিশেষ এলাকার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আলাদা চিঠিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় রোহিঙ্গারা ভোটার হতে নানা পন্থা অবলম্বনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিটি বিশেষ ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে ইসির নির্দেশনা সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়েছেন তিনি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর