শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
কাটা হচ্ছে ‘ভিমের জাঙ্গাল’

লুটেরাদের কবলে মহাস্থানগড়

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

লুটেরাদের কবলে মহাস্থানগড়

বগুড়ায় হাজার বছরের ঐতিহ্যের মহাস্থানগড় লুটেরাদের কবলে পড়েছে। শহরের কয়েকজন প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং ইটভাটা মালিক যোগসাজশ করে ‘ভিমের জাঙ্গাল’ অংশ থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা শুরু করেছেন। প্রতিদিন ট্রাকে করে এ মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। জানা গেছে, এভাবে লুটেরা চক্র দিনে পাঁচ হাজার টাকার শ্রমিক খাটিয়ে ২০ হাজার টাকা আয় করছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এর কয়েক বছর আগে শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের পাশ দিয়ে প্রসারিত ভিমের জাঙ্গালের একটি অংশ থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় দেওয়া হয়। ওই সময় এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ পেলে প্রশাসন মাটি খনন রোধে কার্যক্রম হাতে নেয়। কিন্তু এখন আবারও লুটেরা চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা আধুনিক যন্ত্র (এসকেলেটর) বসিয়ে মাটি তুলে তা ট্রাক বোঝাই করে নদী ভরাটের কাজে, ইটভাটার কাজে, গর্ত ভরাটে, নতুন বাড়ি নির্মাণে সরবরাহ করছে। বিমের জাঙ্গালের বড় বড় বৃক্ষও এরই মধ্যে কেটে সাবাড় করা হয়েছে। এ কাজে প্রভাবশালীরা এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, এখানে প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। মহাস্থানগড়ের জমির দুর্গের মধ্যে রয়েছে শাহ সুলতান বলখী (রহ.) মাজার, বৈরাগীর ভিটা, বেহুলা লখিন্দরের (কথিত) বাসরসহ বিভিন্ন নিদর্শন। দুর্গের বাইরেও রয়েছে শ’খানেক ঢিবি। প্রভাবশালী মহল এ ঢিবিগুলো থেকেও মাটি কেটে বিক্রি করছে। জানা গেছে, প্রভাবশালীরা দুই বছর ধরে বগুড়া সদর উপজেলার চাঁদপুর মেটেলপাড়া অংশে ভিমের জাঙ্গাল নামের ঢিবি থেকেও অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করে আসছে। এ ছাড়া প্রাচীন আমলের বিভিন্ন পুরাকীর্তি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানগড়ে।

প্রাচীর বেষ্টিত মহাস্থানগড়ে ভিতরে রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রাচীরের বাইরেও রয়েছে প্রাচীন নিদর্শন ছোট-বড় শতাধিক ঢিবি বা ছোট পাহাড়। প্রভাবশালী মহল এসব ঢিবি কেটেও মাটি বিক্রি করছে। স্থানীয়দের মতে, এভাবে মাটি কাটার ফলে মহাস্থানগড়ের ঐতিহ্য যেমন হারাচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তারা দ্রুত ঢিবি কাটা বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর, বগুড়ার সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘মহাস্থানগড়ের ৪২টি প্রত্নতাাত্ত্বিক সাইটের মধ্যে আটটি সাইট অধিদফতরের আওতায় রয়েছে এবং সেগুলো খনন করে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বাকি সাইটগুলো যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য নজরদারির মধ্যে রয়েছে। আর বিমের জাঙ্গালে যারা মাটি কাটছে তাদের এরই মধ্যে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ মাটি কাটে তবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর