সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ‘ক্রিকেট বাজি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

ক্রিকেট বাজির ‘স্বর্গ ভূমি’তে পরিণত হয়েছে দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জ। যে কোনো ক্রিকেট ম্যাচকে ঘিরে এ বাজারে চলছে ‘বাজির উৎসব’। ক্রিকেট বাজি ধরতে অনেক ব্যবসায়ী হয়েছেন নিঃস্ব। অনেকে হয়েছেন লাপাত্তা। পক্ষান্তরে ক্রিকেট বাজির দালালি করেই অনেক দালাল আজ শূন্য থেকে কোটিপতি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে প্রায় পাঁচ বছর আগে থেকে ক্রিকেটকে ঘিরে শুরু হয় বাজি। শুরুতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এক ব্যবসায়ী অপর ব্যবসায়ী ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে বাজি ধরতেন। কয়েক মাসের ব্যবধানে ম্যানুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাজি ধরা শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে তারা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বেট-৩৬৫ এবং বেট-৬৯-সহ আরও কয়েকটি বেটিং সাইটের মাধ্যমে ক্রিকেট বাজি ধরছেন। শুরুতে ম্যাচভিত্তিক বাজি হলেও বর্তমানে বাজির বহু শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটেছে। এখন ওভার, বল হিসেবে বাজি ধরেন চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই-ই নয় কোন ব্যাটসম্যান কত রান নেবেন কিংবা কোন বোলার কয় উইকেট নেবেন- তা নিয়েও বাজি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। দেশের অন্যতম এ পাইকারি বাজারে শুধু ক্রিকেট বাজির দালালি করে অনেকে এখন শূন্য থেকে হয়ে গেছেন কোটিপতি। কেউ দেনায় পড়ে বাজি ছেড়ে দিতে চাইলেও বাজি দালালদের কারণে ওই চক্র থেকে বের হতে পারেন না। অনেক ব্যবসায়ী ক্রিকেট বাজি থেকে বের হতে গিয়ে দালালদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। অনেক সময় বাজির দালালরাই ব্যবসায়ীদের ঋণ দেন বাজি করতে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জে শত টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি হয়। এক একটি বাজির অনুপাত হয় ১:১.৫, ১:।

 

‘ভালোবাসা’ ছড়িয়ে

পড়েছে সিলেটে

সিলেট : এই ‘ভালোবাসা’ সেই ভালোবাসা নয়। এই ‘ভালোবাসা’ একটি জুয়ার নাম। সিলেটে এই নতুন নামের জুয়ার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ। এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে চলছে গ্রেফতার অভিযান। তারপরও সিলেটের বিভিন্ন স্থানে এই নতুন নামের জুয়া ছড়িয়ে পড়ছে।

কিছুদিন আগেও সিলেটজুড়ে ‘শিলং তীর’ ‘ঝান্ডমান্ডু’ আর ‘বউরানী’ নামের জুয়ার আগ্রাসন ছিল। এসব জুয়ার বিরুদ্ধে র‌্যাব ও পুলিশের কঠোর অবস্থানের ফলে জুয়াড়িরা কৌশল বদলে ফেলেছে। এসব নামের জুয়ার আসর বন্ধ করে কিছুদিন নীরব ছিল জুয়াড়িরা। কিন্তু অতি সম্প্রতি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে জুয়াড়ি চক্র। শিলং তীর, বউরানী আর ঝান্ডুমান্ডু বাদ দিয়ে ‘ভালোবাসা’ নামের জুয়া দিয়ে চলছে তাদের অপতৎপরতা। গত ১৫ সেপ্টেম্বর র‌্যাব এই নতুন নামের জুয়ার সন্ধান পায়। এরপর ফের জুয়ার বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে থাকে র‌্যাব ও পুলিশ। অভিযানে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে ‘ভালোবাসা’ নামক জুয়ার বোর্ডের খোঁজ পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ প্রসঙ্গে র‌্যাব-৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জুয়াড়িরা কৌশল বদলে ভালোবাসা নাম দিয়ে জুয়ার আসর চালাচ্ছিল। সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে এই নতুন জুয়ার সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর থেকে এ জুয়ার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘শিলং তীর বা ঝান্ডুমান্ডু জুয়া যেভাবে খেলা হতো, ভালোবাসা জুয়াও সম্ভবত ঠিক সেভাবেই খেলে জুয়াড়িরা।’ সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা বলেন, ‘ভালোবাসা নামের জুয়া সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। আমরা এ জুয়ার কুশীলবদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছি।’

 

বগুড়ার টাউন ক্লাব থেকে

সরঞ্জামসহ গ্রেফতার ১৫

 

বগুড়া : মিনি ক্যাসিনো নামে পরিচিত বগুড়া টাউন ক্লাবে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযান চলাকালে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী টাউন ক্লাবের দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক শামীম কামাল শামীমসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর গতকাল দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

জানা গেছে, শনিবার রাত ৯টায় টাউন ক্লাবে জেলা পুলিশের অভিযান শুরু হয়। শত বছরের এই ক্লাবে পুলিশের অভিযান চলাকালে নগদ ১ হাজার ৬০০ টাকা, জুয়া খেলার বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করে। টাউন ক্লাবে জুয়া (তাস) খেলাকালে গ্রেফতার ১৫ জনকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বগুড়া শহরের সূত্রাপুরের গোহাইল রোডের মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে পুত্র শামীম কামাল শামীম (৬০), জেলা শহরের নারুলী আকন্দপাড়ার মৃত মাহমুদ আলীর ছেলে গোলাম আলী (৭৩), দক্ষিণ চেলোপাড়ার মৃত হাতেম আলীর ছেলে হেলাল উদ্দিন (৬৫), বাদুরতলার মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. খালেক (৬৮), মালগ্রাম খন্দকারপাড়ার মৃত আলতাব হোসেনের ছেলে আমিনুল ইসলাম (৫০), নিউমার্কেট এলাকার মৃত শহিদুল আলমের ছেলে মো. মুকুল (৬৮), নামাজগড় তেঁতুলতলার মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে মঞ্জুরুল আলম (৭০), সেউজগাড়ী ম লপাড়ার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে আবদুল ওয়াছেক পিন্টু (৬৫), নারুলী উত্তরপাড়ার আবদুল হকের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৪৮), চান্দপাড়ার মামুনুর রশীদের ছেলে মো. সাগর (২৬), নারুলী পশ্চিমপাড়ার মৃত উমিরউদ্দিনের ছেলে মোক্তার হোসেন (৪৮), ছোট বেলাইলের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে বাচ্চু মিয়া (৪৮), ধাওয়াপাড়ার মৃত কলিম উদ্দিনের ছেলে আবুল হোসেন (৭০), পাইকারপাড়ার মৃত আবদুল গোফফারের ছেলে কে এন আলম শহিদুল ইসলাম (৬৫), গাবতলী উপজেলার হামিদপুরের মৃত আবেদ আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩৮)।

 

বাগেরহাটে গ্রেফতার

আতঙ্কে জুয়াড়িরা

 

বাগেরহাট : রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জুয়ার আসরে র‌্যাব অভিযান চালানোর খবরে বাগেরহাটের জুয়াড়িদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, অফিসার্স ক্লাব, বাগেরহাট ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাবের নামে চলা জুয়ার আসর হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেছে। বাগেরহাটে ক্যাসিনো ধরনের না হলেও বিভিন্ন ক্লাবগুলো জুয়ার আসরে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল ‘তাসের কাটিং’ ‘কাচ্চু’ ‘হাইড্রো গেম’সহ বিভিন্ন নামের জুয়া খেলা। ক্রীড়া সংস্থাগুলো চালাচ্ছিল হাউজি জুয়া। জেলা ও উপজেলা সদরসহ আশপাশের জেলা থেকে আসা প্রভাবশালী  নেতা ও কালো টাকার মালিকরাই ছিলেন বাগেরহাট জুয়ার আসরের মধ্যমণি। এ ছাড়া মিউজিক একাডেমি ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে রাতভর চলে আসছিল জুয়ার আসর। এত দিন পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বাগেরহাটে জমজমাট জুয়ার আসর চলে এলেও গত দুই দিনে জুয়ার আসর আর বসছে না।

বাগেরহাট জেলা ক্রীড়া সংস্থায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্টেডিয়ামে সপ্তাহে ৫ দিন হাউজি খেলা চললেও দুই দিন করে ৪ দিনের খেলা হতো জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের নামে। আর একদিনের খেলা হতো অফিসার্স ক্লাবের নামে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাদের সদস্য ক্লাবগুলোকে হাউজির টাকা ভাগাভাগি করে দিত। তবে গত দুই দিন ধরে স্টেডিয়ামের হাউজি খেলা কোনো ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জুয়ার আসরে র‌্যাব অভিযান ও শাসক দলের প্রভাবশালী নেতাদের গ্রেফতারের খবরে বাগেরহাটের জুয়াড়িদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর