বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আয়তনে বৃহৎ সুবিধায় শূন্য

বরিশাল বিসিক শিল্পনগরী

রাহাত খান, বরিশাল

আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পনগরী। কিন্তু রাস্তাঘাট-কালভার্ট, ড্রেনেজ, সুপেয় পানি সরবরাহ, সিমানাপ্রাচীর, নিরাপত্তাসহ তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই ১৩০.৬ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিসিকে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন থাকলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নেই। গ্যাস সরবরাহ দূরের কথা, গ্যাসের পাইপ লাইনই নেই। এ অবস্থায় উৎপাদন মূল্য বেশি পড়ায় অন্যান্য অঞ্চলের শিল্পের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না বরিশাল বিসিক। নানা সংকটের কারণে এ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে বড়-ছোট ৭৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বরিশাল বিসিকের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে, সেগুলোরও নিবু নিবু অবস্থা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আর কোনো উন্নয়ন হয়নি বরিশাল বিসিকে। এ কারণে বিকাশ হয়নি কোনো শিল্পের। যেগুলো আছে তাও বন্ধ হওয়ার পথে।

অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করে বরিশাল বিসিককে কর্মমুখর করার দাবি জানিয়েছেন বরিশালের ব্যবসায়ী নেতারা। এদিকে অনুন্নত ভূমির উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করতে অর্ধশত কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিসিকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।

১৯৬০ সালে নগরীর কাউনিয়া এলাকায় ১৩০.৬ একর জমির ওপর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) প্রতিষ্ঠিত হয়। বরিশাল বিসিকে ৩৫৬টি উন্নত এবং ১১৪টি অনুন্নত প্লট রয়েছে।

এর মধ্যে গত ৫৯ বছরে বরাদ্দ হয়েছে ৩৭৩টি প্লট। এখানে শতভাগ রপ্তানিমুখী ফরচুন সুজ লিমিটেড ও প্রিমিয়ার সুজ লিমিটেড, বেঙ্গল বিস্কুট লিমিটেডসহ এ পর্যন্ত ১৭৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও বন্ধ হয়ে গেছে ৭৭টি। বর্তমানে বড়-ছোট মিলিয়ে এখানে চালু আছে ৯৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায় প্রায়ই থমকে যাচ্ছে উৎপাদন। পাইপ লাইনের গ্যাসের সুবিধা না থাকায় বাড়ছে উৎপাদনমূল্য। তাই গ্যাস, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এবং অবকাঠামো সুবিধা আছে এমন এলাকার শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না বরিশাল বিসিকের শিল্পগুলো।

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠার পর বরিশাল বিসিকের আর কোনো উন্নয়ন হয়নি। ৫৯ বছর ধরে উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় শিল্পনগরীর মর্যাদা হারিয়েছে বিসিক।

শিল্পনগরীর শতভাগ রপ্তানিমুখী ফরচুন সুজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আমানুর রহমান বলেন, বরিশাল বিসিক আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প এলাকা। কিন্তু এখানে কোনো বড় বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে আসেন না। কারণ এখানে সেই ফ্যাসিলিটিগুলো নেই। এখানে দরকার রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ-কালভার্ট, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস, সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তার জন্য পুরো বিসিক একটা বাউন্ডারির মাধ্যমে আবদ্ধ করতে পারলে বহিরাগতরা এখানে এসে বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারত না।

বেঙ্গল বিস্কুট লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, একটা শিল্পের বিকাশের প্রধান চাবিকাঠি হচ্ছে ওই শিল্পের যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, ড্রেনেজ, সুপেয় পানি সরবরাহ এবং বিশেষ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু বিসিকের রাস্তাঘাটের অবস্থা শোচনীয়। এ কারণে চলমান শিল্পের পরবিহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা একেবারেই খারাপ। আবাসিক এলাকার সঞ্চালন লাইনেই বরিশাল বিসিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থায়ে। বিদ্যুৎ যে কোনো সময় চলে যাচ্ছে। এতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিসিকের উন্নয়নে বিদ্যুৎ লাইনে আলাদা ফিডারের ব্যবস্থা, যোগাযোগ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

সম্প্রতি পাস হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা খায়রুল বাশার বলেন, ৫০ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্পে রাস্তা-ড্রেন সংস্কার, নতুন বিদ্যুৎ লাইন, পানির পাম্প ও পাইপ লাইন এবং ৩০ একর অনুন্নত ভূমির উন্নয়ন হবে। ভূমি উন্নয়নের কার্যাদেশ হয়েছে। রাস্তাঘাট-ড্রেন, পাম্প, বিদ্যুতের আলাদা ফিডার এবং পানির পাইপ লাইনের টেন্ডার হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এগুলো বাস্তবায়ন হবে।

সর্বশেষ খবর