শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কে করবেন বাজিমাত

রংপুর প্রতিনিধি

রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল। আগামীকালের ভোটকে কেন্দ্র করে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ২৮ বছর ধরে এরশাদের নিজের আসন হিসেবে বিবেচিত এই রংপুর-৩ আসনটি আবারও জাতীয় পার্টির ঘরেই থাকবে, নাকি স্বতন্ত্র পরিচয়ে         নির্বাচনে অংশ নেওয়া এরশাদের ভাতিজা বাজিমাত করবেন- তা দেখার অপেক্ষা করছেন সবাই। বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, জাপা প্রার্থী এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহী ওরফে সাদ এরশাদ এবং এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার ওরফে আসিফের (আসিফ শাহরিয়ার) মধ্যে হবে মূল লড়াই।

জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুর সদর আসনটি বরাবরই দলটির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছিল। ২০০৮ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনেই কেবল আসনটি ছেড়েছিলেন তিনি। সে বছর ঢাকার গুলশান আসনেও (ঢাকা-১৭) জয়ী হওয়ায় এ আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে জয়ী হন তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। আসনটিকে তার দুর্গ বলার অন্যতম কারণ ১৯৯০ সালে বিশেষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ রাষ্ট্রপতির শাসন ব্যবস্থার বদলে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় ফিরে এলে রংপুরসহ উত্তরবঙ্গে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে থাকেন এরশাদ।

 ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বন্দীদশায় থেকে, ২০০১ ও ২০০৮ সালে মুক্ত প্রচারণায় অংশ নিয়ে, ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে সিএমএইচে ভর্তি থেকে এবং শেষবার ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থেকেও রংপুর-৩ আসনটি থেকে জয়লাভ করেন এরশাদ। তার মৃত্যুর পরও আসনটি তাই জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাজনীতির মারপ্যাঁচে এ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর জাতীয় পার্টির প্রার্থী রাহগীর আল মাহী ওরফে সাদ এরশাদ লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বাড়তি সুযোগ পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা ছিল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিশেষ করে দলটির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের।

 কিন্তু এরশাদ নিজে আসনটিতে তার উত্তরসূরি নির্বাচন না করে যাওয়ায় উপনির্বাচনে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরসহ একাধিক নেতা এ আসনে নির্বাচনে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রকাশ্যে আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে চান এরশাদের ভাতিজা ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার ওরফে আসিফ (আসিফ শাহরিয়ার)। রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের পূর্ব মুহূর্তে দলটির চেয়ারম্যান পদ ও সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন নিয়ে গৃহবিবাদ তৈরি হয় এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জি এম কাদেরের মধ্যে। সে সমস্যা সুরাহার উপায় হিসেবে রওশন এরশাদের দাবি অনুযায়ী সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদের পাশাপাশি তার ছেলে সাদ এরশাদকে রংপুরের আসনটিতে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ছাড় দিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান পদটি নির্বিঘ্ন করে নেন জি এম কাদের। তবে এরশাদের ছেলে হলেও রংপুরে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে শাদ এরশাদ একেবারে অপরিচিত ও নবীন হওয়ায় তাকে মেনে নিতে অনীহা দেখায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ। আসনটিতে এরশাদের সম্মানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিলেও নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে এখনো একাট্টা অবস্থানে যেতে পারেনি জাতীয় পার্টি। রংপুরের স্থানীয় ও এরশাদের ভাতিজা হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ারকে তাই সাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ভাবছে স্থানীয় নেতা-কর্মী ও ভোটাররা।

বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ : উপনির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা গতকাল সকাল ৯টায় শেষ হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচনের দিন (৫ অক্টোবর) পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ এবং বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

শেষ সময়ে জাতীয় পার্টির রাহগীর আল মাহী ওরফে সাদ এরশাদ, বিএনপির রিটা রহমান ও জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার ওরফে আসিফ (আসিফ শাহরিয়ার) নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করে তাদের প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিন প্রার্থীই জয়লাভের বিষয়ে আশাবাদের কথা জানান।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর