শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্লক হচ্ছে সন্দেহজনকদের এনআইডি

চট্টগ্রামে হাজার হাজার রোহিঙ্গার হাতে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র

গোলাম রাব্বানী

ব্লক হচ্ছে সন্দেহজনকদের এনআইডি

চট্টগ্রাম অঞ্চলের রোহিঙ্গা সন্দেহভাজনদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে যারা সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারবে তাদের এনআইডির ব্লক খুলে দেবে ইসি। এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের একটি জালিয়াত চক্র দেড় বছরে দুই হাজারের বেশি লোকের হাতে ‘জাল জাতীয় পরিচয়পত্র’ তুলে দিয়েছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশনের কারিগরি তদন্ত দল। জালিয়াত চক্রের সঙ্গে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ ও ঢাকার এনআইডি উইংয়ের স্টাফদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইসির কারিগরি তদন্ত দল কাজ শেষ করলে সন্দেভাজনদের এনআইডি ব্লক করা হবে। জানা গেছে, জালিয়াত চক্র রোহিঙ্গাদের এনআইডি তৈরি করে দেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের একটি বাসায় অফিস খুলেছিল। এখানে নিবন্ধন ফরম পূরণ করানো ও ছবি তোলা হতো। ইসির হারানো ল্যাপটপের মাধ্যমে ডেটা এন্ট্রি করে তা পাঠানো হতো চট্টগ্রাম, কুমিল্লা বা ঝিনাইদহের কোনো অফিস স্টাফের কাছে। সেখান থেকে এনআইডি উইংয়ের কাউকে পাঠানো হতো সার্ভারে আপলোড করার জন্য। নিবন্ধন শেষে এনআইডি নম্বর তৈরি হলে পুরনো পরিচয়পত্রের আদলে ভুয়া এনআইডি সরবরাহ করা হতো। ২০১৬ সালে ইস্যু এনআইডির আদলে কার্ড বানিয়ে ১৫ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকার বিনিময়ে তারা দালালের হাতে তুলে দিত। এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অনুসন্ধান চালিয়ে তদন্ত দল জানতে পেরেছে, নির্বাচন কমিশনের কিছু কর্মচারী এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের সহযোগিতায় জালিয়াতি চালিয়ে আসছে চক্রটি। এক  রোহিঙ্গা নারী ভুয়া এনআইডি সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে পাসপোর্ট নিতে গিয়ে ধরা পড়ার পর জালিয়াত চক্রের খোঁজে নামে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার অফিস সহায়কসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, এবার পুরো জালিয়াত চক্র ধরা পড়বে। এজন্য বর্তমানে যারা কাজ করছে, তাদের পাশাপাশি অতীতে যারা এনআইডি প্রকল্পে কাজ করেছিল, নানা কারণে বরখাস্ত হয়েছে, চাকরি ছেড়েছে তাদের বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময়ও ওই চক্র ভুয়া তথ্য দিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ নিয়ে থাকতে পারে- এমন সন্দেহে নিবন্ধনের কাজ সম্পৃক্তদের সবার নামের তালিকা ও কাজের খতিয়ান পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০০৭-২০০৮ সালে দেশে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু হয়। এক যুগে তালিকাভুক্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি নাগরিক, যাদের তথ্য ইসির ডেটাবেজে রয়েছে। আরও ৮০ লাখ ভোটারযোগ্য নাগরিকের তথ্য হালনাগাদের কাজ চলছে। ২০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। ইসির কারিগরি দলের সদস্য এনআইডি উইংয়ের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাহাব উদ্দিন জানান, এনআইডি জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কক্সবাজারে পাঁচজন এবং চট্টগ্রামে তিনজন আটক হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি, ২০১৬ সাল বা তার আগে ভোটার নিবন্ধন কাজে ব্যবহার করা অন্তত দুটি ল্যাপটপ ভুয়া তথ্য নিবন্ধন ও এনআইডি সরবরাহের কাজে ব্যবহার হয়েছে। ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৭-২০০৮ সালে ব্যবহৃত কিছু অকেজো ল্যাপটপ নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় অন্তত পাঁচটি ল্যাপটপ হারিয়ে যায়। যার দুটি জালিয়াত চক্রের হাতে পড়ে বলে তদন্ত দলের সন্দেহ।

সর্বশেষ খবর