শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে ভাসমান ধান-চালের হাট

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে ২০০ বছরের পুরনো ভাসমান ধান-চালের হাটের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। কুটিয়ালদের (ধান প্রক্রিয়াজাত করে চাল উৎপাদনকারী) নিম্নমানের চাল উৎপাদনের কারণে ক্রেতারা এ হাট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কুটিয়ালরা ধান ভালোভাবে না শুকিয়ে চাল উৎপাদন করায় ক্রেতাদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা এখন কুটিয়ালদের চাল না কিনে অটোরাইস মিলের চালের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। তাই ভাসমান ধান-চালের হাটের ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুটিয়ালদের আধুনিক প্রক্রিয়ায় চাল উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবি উঠেছে। বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর দুই তীরে ধান-চালের দুটি ভাসমান হাটের ঐতিহ্য ২০০ বছরেরও পুরনো। কুটিয়ালরা ভাসমান হাট থেকে ধান প্রক্রিয়াজাত করে চাল উৎপাদন করে নিয়ে আসেন সন্ধ্যা নদীর দুই তীরের ভাসমান হাটে। বিভিন্ন স্থানের শত শত বেপারী নৌকায়-ট্রলারে করে ধান এবং চাল কিনে নেয়। পরে তারা সন্ধ্যা নদীর দান্ডয়াট ভাসান মহল (ভাসমান) ধানের হাটে ওই ধান কমিশনে কুটিয়ালদের কাছে বিক্রি করেন। বেপারীরা কমিশনের টাকা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কুটিয়ালরা ধান কিনে নৌকার মধ্যে পানি দিয়ে দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখেন। পরে নৌকার ভেজা ধান তীরে উঠিয়ে চুলার (তাফাল) ওপর ডোঙ্গায় রেখে সিদ্ধ করে শুকিয়ে রাইস মিলে নিয়ে মারাই করে চাল উৎপাদন করেন। সেই চাল তারা লঞ্চ ঘাট সংলগ্ন সন্ধ্যা নদীর ভাসমান চালের হাটে বিভিন্ন এলাকার বেপারীদের কাছে বিক্রি করেন।

জানা যায়, ২৫-৩০ বছর আগেও কুটিয়ালদের মারাই করা বাঁশ ফুল বালাম ও মোটা চাল এবং বোরো (ইরি) চাল কিনে বেপারীরা নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চযোগে ভোলা, লালমোহন, খুলনা, বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, পিরোজপুর, বরগুনা, আমতলী, পাথরঘাটা, কালকিনি, মাদারীপুর, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, কাঠপট্টি, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করত।

বর্তমানে কুটিয়ালরা ধান কম শুকানোর কারণে তাদের চাল বেপারীরা কিনতে চাচ্ছেন না। এ কারণে ভাসমান হাটের পরিধি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। বানারীপাড়ার উত্তরপার বাজারের চাল আড়তদার মজিবুর রহমান বলেন, কুটিয়ালরা কম শুকানো ধান দিয়ে চাল উৎপাদন করে বিক্রি করেন। ওই চাল বস্তায় রাখলে অল্প দিনের মধ্যে গরম হয়ে দলা বেঁধে যায়। ওই চাল বস্তায় বেশি দিন রাখা যায় না। তার মতে, অনেক ব্যবসায়ী অটো রাইস মিলে বোরো (ইরি) কিংবা মোটা চাল ছাঁটাই করে বালাম চালের মতো চিকন করে মিনিকেট নাম দিয়ে চড়া দামে বাজারজাত করছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে কুটিয়ালদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাল উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। বানারীপাড়ার নলশ্রী গ্রামের প্রবীণ কুটিয়াল রুস্তম আলী বলেন, এখন বিভিন্ন এলাকায় অটোরাইস মিল হয়েছে। এ কারণে কুটিয়ালদের চাল আগের মতো চলে না। এই দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে চাল উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ সাদীদ স্থানীয় কুটিয়ালদের চাল যাতে আগের মতো সারা দেশে বাজারজাত করা যায় সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেন।

 

সর্বশেষ খবর