সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

যে কারণে ভোটের হার কম

রংপুর-৩ উপনির্বাচন

রেজাউল করিম মানিক, রংপুর

কোনো ধরনের গোলযোগ ছাড়াই শেষ হয়েছে রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচন। আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস বলছে, শনিবার অনুষ্ঠিত এ উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ২২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। যদিও মোট ভোটের হার এবং প্রদত্ত ভোটসংখ্যার হিসাব করলে শতাংশ আরও কম দাঁড়ায়। নির্বাচন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনে স্থানীয় প্রার্থীর অনুপস্থিতি, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী না থাকা এবং প্রচার-প্রচারণার যথেষ্ট অভাবের কারণেই নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের আগ্রহ কম ছিল। রংপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচন থেকে ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ হলো, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি উভয় দলের প্রার্থীই ছিল বহিরাগত। নির্বাচনের পর বিভিন্ন কাজে ডিও লেটার পেতে হলে জনগণকে ঢাকায় যেতে হবে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল শাহরিয়ার ওরফে আসিফ (আসিফ শাহরিয়ার) রংপুর অঞ্চলের হলেও তিনি এ আসনে নবাগত হওয়ায় ভোটারদের তার প্রতিও আগ্রহ ছিল না। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় এবং প্রচার-প্রচারণার যথেষ্ট অভাবের কারণে ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ কম ছিল। ভোটের হার সম্পর্কে জানতে চাইলে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, প্রার্থিতায় জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন হয়নি। জাতীয় পার্টির প্রার্থী এই প্রথম রংপুর এসেছেন। বিএনপির প্রার্থীর বাবার বাড়ি এ অঞ্চলে হলেও তারা বহুকাল ধরেই ঢাকার বাসিন্দা। শুধু নির্বাচনের সময় এলাকায় আসেন। তাই মানুষের ভোট নিয়ে আগ্রহ ছিল না। কেননা উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের কাউকেই জনগণ নিজেদের লোক বলে ভাবতে পারেননি। আর এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দল সরাসরি নির্বাচনে না থাকায় তাদের নেতা-কর্মীরাও মাঠে নেই। তাই নির্বাচনও জমেনি। রংপুর-৩ আসনের অধীন রংপুর সদর থানার হরিদেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, নিয়ম রক্ষার ভোট হওয়ায় এটা নিয়ে মানুষের আগ্রহ ছিল না। আর রংপুরের মানুষ বহিরাগতদের ভোট দিয়ে ক্লান্ত। তাই তারা ভোট দিতে যাননি।

ভোট কম পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, নির্বাচনে কোনো স্থানীয় প্রার্থী নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম। আর যারা প্রার্থী হয়েছেন তারাও জনগণের কাছে পৌঁছতে পারেননি। ইউনিয়নের ভোটাররা অনেকেই জানতেন না কিসের ভোট, কেন ভোট আর প্রার্থীই বা কারা। তিনি বলেন, প্রচারণা যতটুকু হয়েছে তা ছিল কেবল শহরকেন্দ্রিক।

তবে সরকারি চাকরিজীবী ইমরুল কায়েস দাবি করেন, রংপুর অঞ্চলের দীর্ঘদিনের ‘মিথ’ যে আর অবশিষ্ট নেই, এবারের নির্বাচনে তার প্রমাণ মিলেছে। বিজয়ী প্রার্থী সাদ এরশাদ উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে জিতলেও বিষয়টিকে ইমরুল কায়েস দেখছেন জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রভাব হিসেবে। কেননা দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরের, আর মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাও রংপুরের। তারা জাতীয় নেতা। তাদের আহ্বানে জাতীয় পার্টির ফিক্সড ভোটগুলো সাদের পক্ষে পড়েছে। কিন্তু যদি ‘জাতীয় পার্টি মিথ’ কাজ করত, তাহলে লাঙ্গল  আরও বেশি ভোট পেত।

উল্লেখ্য, রংপুর-৩ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৪১ হাজার ২২৪ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ৯৪ হাজার ৬টি। জাতীয় পার্টির প্রার্থী রাহগির আল মাহি ওরফে সাদ এরশাদ ৫৮ হাজার ৮৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী বিএনপির রিটা রহমান পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৪৭ ভোট।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর