মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজপথে নেই ইসলামী দলগুলো

বড় কর্মসূচি দূরের কথা ঘরোয়া কর্মসূচিতেও অনুমতি নিতে হয়

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

রাজপথে নেই ইসলামী দলগুলো

রাজপথের কর্মসূচিতে নেই ইসলামী দলগুলো। বিশেষ করে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তির কারণে ইসলামী দলগুলোর কর্মতৎপরতা এখন বিবৃতি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। লক্ষ্য ছিল নৌকা প্রতীকে ভোট করে মন্ত্রী-এমপি হয়ে ক্ষমতার স্বাদ নেবেন। কিন্তু নৌকা প্রতীক জোটেনি। ভোটের পর এখন অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। দলগুলোর নেতারা বলছেন, বড় কর্মসূচি পালন দূরের কথা, ঘরোয়া কর্মসূচি পালনেও প্রশাসনের অনুমতি নিতে হচ্ছে। কিছু ইস্যুতে সীমিত পরিসরে কর্মসূচি পালনের অনুমতি মিললেও জাতীয় কোনো ইস্যু, বিশেষ করে রাজনৈতিক ইস্যুতে মাঠে নামার কোনো অনুমতিই মিলছে না। জানা যায়, ধর্মীয় ইস্যু ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে একসময় সরব থাকত ইসলামী দলগুলো। নেতারা বলছেন, কোনো কিছু করতে গেলেই অনুমতি নিতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনুমতি পাওয়া যায় না। চাপ-আতঙ্কের কারণে ঘরোয়া কর্মসূচিতে বন্দী হয়ে পড়ছেন তারা। এ ছাড়া বিভক্তি-বিভাজনের ঘটনাও দলীয় কর্মকান্ডে স্থবিরতার অন্যতম কারণ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নয় মাস মেয়াদ অতিবাহিত হলেও গঠনমূলক কোনো ইস্যুতে রাজপথের কর্মসূচি দিতে পারছেন না দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। তবে বিবৃতি-বিজ্ঞপ্তিতে নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিদিনই তাদের মনোভাবের কথা জানাচ্ছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরিক ইসলামী দলগুলোর নেতাদের অবস্থাও একই। তারা বলেন, ‘সময় এলে কথা বলব।’ একই অবস্থা সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ইসলামী দলগুলোর। এ ছাড়া স্বতন্ত্র ইসলামী দলগুলোরও নেই কোনো কর্মসূচি। বিগত দিনগুলোতে ছোটখাটো ইস্যুকে পুঁজি করে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিলেও বর্তমানে বিবৃতি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিই হচ্ছে বেশির ভাগ দল এবং সংগঠনের ভরসা। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১১টি ইসলামী ধর্মীয় দল। এর বাইরে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। জামায়াত প্রকাশ্য তৎপরতা চালাতে পারছে না ২০১০ সালের পর থেকেই। শীর্ষ নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে  কেন্দ্র করে দলটির নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্য তৎপরতা অঘোষিতভাবেই নিষিদ্ধ। দলের আমির মকবুল আহমাদ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার অঘোষিতভাবে জামায়াতের প্রকাশ্য কাজকর্ম নিষিদ্ধ করে রেখেছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংগঠন এখন মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিগত দিনে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরব থাকলেও বর্তমানে এ সংগঠনের কর্মসূচি পালনেও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন দলের আমির সৈয়দ রেজাউল করীম। দলটির কার্যক্রম চলে পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে। কার্যালয় এবং আশপাশে প্রায়ই কর্মসূচি পালন করে দলটি। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে কর্মসূচি পালন করি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে থাকা একমাত্র ইসলামী দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। ১৪ দলভুক্ত বলে সংগঠনটি সভা-সমাবেশের জন্য প্রশাসনের অনুমতি পেতে সমস্যা হয় না। তবু রাজপথে কোনো কর্মসূচি নেই দলটির। সম্প্রতি দলটির সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী তাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক তৎপরতার ব্যাপারে বলেন, ‘কাশ্মীর, আসাম পরিস্থিতি এবং সীমান্ত হত্যাসহ জাতীয় কিছু ব্যাপারে জমিয়তের উদ্যোগে আমরা সমাবেশ, মানববন্ধন, প্রেস কনফারেন্সসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছি।

 যেখানে কোনো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করার অনুমতি নেই সেখানে কীভাবে আমরা রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করব?’ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক তনয় মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, জাতীয় সমস্যা আছে অনেক। কিন্তু আন্দোলনের পরিবেশ নেই।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে থাকার কারণে ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সভা-সমাবেশের অনুমতি পায় না বলে জানান নেতা-কর্মীরা। দলগুলোর নেতৃস্থানীয়রা বলেন, ‘যেখানে বিএনপির মতো দল সভা-সমাবেশের অনুমতি পায় না, সেখানে আমরা কীভাবে পাব!’ অন্যদিকে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন মাঠের কর্মসূচিতে সক্রিয় না থাকায় দলগুলোর মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব বেড়েছে। হেফাজতে ইসলামের মধ্যেও কয়েকটি ধারা। কেন্দ্র ও মহানগর কমিটির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক দলের বাইরে হেফাজতে ইসলামসহ শত শত সংগঠন রয়েছে। তাদেরও তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। জামায়াত অজ্ঞাত স্থান থেকে গণমাধ্যমে নিয়মিত বিবৃতি ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর