মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বরেন্দ্র জাদুঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বরেন্দ্র জাদুঘর

রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। কিন্তু জাদুঘরটির আশপাশে গড়ে উঠছে স্থাপনা। ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রেখে নয়, দেয়াল ঘেঁষে উঠেছে স্থাপনাগুলো। প্রাচীরের বাইরে গড়ে ওঠা এসব ভবন থেকে অনায়াসে যাতায়াত করা যায় জাদুঘরের মূল ভবনে। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের পরিচালক আলী রেজা মুহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, বাইরের কয়েকটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ভবনগুলো কীভাবে গড়ে উঠেছে, বলতে পারব না। এই ভবনগুলো হয়তো থাকবেও না। জাদুঘরের ভিতরে আরও দুটি বহুতল ভবন গড়ে তোলা হবে। তখন হয়তো বাইরের এসব ভবন উচ্ছেদ করা হবে। আবার বাইরের আরেকটি মূল্যবান জায়গাও দখল করেছে কেউ কেউ। সেগুলোও উচ্ছেদ করা হবে। তাহলেই জাদুঘরটির সৌন্দর্য যেমন বজায় থাকবে, তেমনি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সঠিক থাকবে। তবে জাদুঘরটির নিরাপত্তার জন্য ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি), স্ক্যানার বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক। জানা গেছে, ইতিহাস চর্চার জন্য ১৯১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করা হয় আজকের বরেন্দ্র জাদুঘরটি। প্রথমদিকে যার নাম ছিল ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’। পরবর্তীতে নাম হয় বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। বিপুলসংখ্যক প্রত্ননিদর্শন, গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য চর্চার শ্রেষ্ঠ পাদপীঠে পরিণত হয় বরেন্দ্র জাদুঘরটি। যা ক্রমেই দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন ও বাংলাদেশের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে ভরা জাদুঘরে পরিণত হয়। নাটোরের দিঘাপতিয়ার রাজপরিবারের সন্তান দয়ারাপুরের খ্যাতিমান রাজা শরৎকুমার রায় প্রতিষ্ঠা করেন এ জাদুঘরটি। বাংলার ইতিহাসের জনক খ্যাত প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অক্ষয় কুমার মৈত্র, প্রখ্যাত প্রতœতত্ত্ববিদ ও বিশিষ্ট মানব তত্ত্ববেত্তা রমাপ্রসাদ চন্দ্র প্রমুখের সহায়তায় শরৎকুমার এই মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করেন।

জানা গেছে, এত দিন পরে এসে এ জাদুঘরটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গোটা জাদুঘর আসছে সিসি ক্যামেরার আওতায়। এ ছাড়াও দর্শনার্থী ও প্রবেশকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শরীরসহ জাদুঘরের সব ধরনের মালামাল প্রবেশ ও বের করার সময় স্ক্যান করার জন্য বসছে স্ক্যানার মেশিন। জাদুঘরটিতে সম্প্রতি প্রায় চার কোটি টাকা খরচ করে সংস্কার করা হয়েছে।

এ ছাড়াও জাদুঘরটিতে আরও কয়েকটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য প্রকল্প অনুমোদনের চেষ্টা করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাবির নিয়ন্ত্রণেই আছে দেশের এই বৃহত্তম প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সবকিছু ঠিকঠাক মতো চললে একেবারে ঢেলে সাজানো হবে এই জাদুঘরটিকে। কিন্তু জাদুঘরের পাশেই বাইরের প্রাচীর ঘেঁষে যেসব বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে, সে ভবনগুলো নিয়ে দেখা দিয়েছে নিরাপত্তাহীনতা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এই মূল ভবনের পশ্চিম পাশেই প্রাচীরের ওপারে আছে ঘনবসতি। এই ঘনবসতির মধ্যেই আবার কয়েকটি বাড়ি একেবারে প্রাচীরের ওপরে গিয়ে ঠেকেছে। এই বাড়িগুলো কোনোটি ৪ তলা আবার কোনোটি ৩ তলা, আবার কোনোটি ৫ তলা। অথচ বরেন্দ্র জাদুঘরটি দোতলা।

স্থানীয় নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, তিন চারটি ভবন একেবারে প্রাচীরঘেঁেষ যেভাবে গড়ে উঠেছে, তাতে যে কোনো সময় মই দিয়ে বা লাফ দিয়েও জাদুঘরের মূল ভবনে  যাওয়া সম্ভব। এতে করে চরমভাবে জাদুঘরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই ভবনগুলো যে যার মতো করেছেন। কেউ কখনো বাধাও দেয়নি। ফলে জাদুঘরের পেছনের দিক দিয়ে যে রাস্তাটি আছে, সেটিও এখন আর নেই বললেই চলে। আবার জাদুঘরের পাশে লম্বা আরেকটি জায়গা আছে, সেটিও দখল করে দোকানপাট ও ক্লাব ঘর গড়ে উঠেছে। এভাবে দেশের বৃহত্তম সম্পদে ভরা জাদুঘরটির নিরাপত্তাই হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’

সচেতন নাগরিক কমিটি রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন বলেন, ‘এই ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনার পাশে কোনো ভবনই হওয়া উচিত নয়। এতে করে যেমন জাদুঘরের সৌন্দর্যহানি হচ্ছে, তেমনি এখানকার নিরাপত্তাও বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এই ভবনগুলো কীভাবে গড়ে উঠল, সেটি খতিয়ে দেখে দ্রুত অপসারণ করা জরুরি।’

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে বর্তমানে প্রত্ননিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে ১১টি গ্যালারি ও অভ্যন্তরীণ বারান্দায়। প্রায় ১৭ হাজার প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রীতে ভরা এই জাদুঘরে এখন মাত্র ৩৫১টির মতো প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী প্রদর্শন হচ্ছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাকিগুলো রাখা হয়েছে মূল ভবনের গুদামে।

সর্বশেষ খবর