বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বগুড়ায় নেশাখোরের কান্ড

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেশা সেবনের ভিডিও দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভিডিওটি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সর্বত্র এখন আলোচনার ঝড় বইছে। ভিডিও চিত্রে আয়েশী ভঙ্গিতে নেশা সেবন করতে দেখা যাচ্ছে তাকে। জাসদ থেকে ২০১২ সালের শুরুতে দলে যোগদান করা নব্য নেতা আনিছুর রহমান নন্দীগ্রাম আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বড় পদ পাওয়ার মাত্র ৯ মাস আগে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পদ পেয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠেন আনিছুর। প্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়েন মাদকের সঙ্গে। এলাকার মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে সখ্য এবং প্রকাশ্যে মাদক সেবন তার রুটিন কাজে পরিণত হয়। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তির এ ধরনের আচরণে ক্ষুব্ধ দলীয় নেতা-কর্মীরা। শুরু থেকেই তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে যুক্ত হয় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ শামীম ও তার ড্রাইভার আফতাব হোসেন নামের দুজন। ভিডিও দৃশ্যে দেখা গেছে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান নেশা (ইয়াবা) সেবন করছেন। ৩ মিনিট ৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। চিত্রে আনিছুর রহমান গেঞ্জি পরে মাদকদ্রব্য সেবন করছে। তার সঙ্গে বসে মাদক সেবন করে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন সহযোগীরা। একাধিক সূত্র জানায়, এর আগেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমানের ইয়াবা ও গাঁজা সেবনের ছবিসহ পোস্টার বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো হয়েছিল। সর্বশেষ তার ভিডিও চিত্রের ঘটনায় গোটা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতারসহ তার বহিষ্কারের জোরালো দাবি উঠেছে। জানা গেছে, আনিছুর রহমান নিয়ন্ত্রণ করেন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল লেখক সমিতি। সেখান থেকে তিনি নিয়মিত চাঁদার একটি বড় অংশ পান। এ ছাড়া অটোটেম্পু মালিক সমিতিসহ হাটবাজার, রাস্তা, ফুটপাথের চাঁদা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। এলাকাবাসী জানায়, সিমলা গ্রামে আনিছুর রহমানের জন্ম। আগে সম্পত্তি বলতে তেমন কিছুই ছিল না। এখন সিমলা বাজারে তিনতলা বিশিষ্ট একটি দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি। এটি ছাড়াও গ্রামে জমিসহ পুকুর করেছেন। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বিগত উপজেলা নির্বাচনের সময় আনিছুর রহমান ও ৩নং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোরশেদুল বারীসহ নেতা-কর্মীদের একটি গ্রুপ নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ বলেন, দলের মানসম্মান বলে আর কিছু থাকল না। তিনি সব সময় ইয়াবায় মত্ত থাকেন। এ কারণে এলাকায় এই নেতার নাম ‘বাবা আনিছ’। আনিছুর রহমান বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। কখনো মাদক সেবন করেন না। কেউ তার মাথা জোড়া দিয়ে ভিডিও বানিয়েছে। মাদক ব্যবসা কিংবা চাঁদা আদায়ের সঙ্গে জড়িত নই। আর উপজেলা নির্বাচনেও নৌকা প্রার্থীর বিরোধিতা করেননি। গতকাল দুপুরে নন্দীগ্রামে আনিছুর রহমানের বহিষ্কার ও গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন। নেশাখোর নেতার বহিষ্কার ও গ্রেফতারের দাবিতে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্যানেল মেয়র আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশ হয়। সমাবেশে অবিলম্বে ‘নেশাখোর’ আনিছুর রহমানসহ তার সহযোগীদের বহিষ্কার ও গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। নন্দীগ্রাম থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শওকত কবির জানান, আনিছুর রহমানসহ তার সহযোগীদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর