শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

‘এই ঘরে আর কোনো দিন আলো জ্বলবে না’

স্ত্রী পুত্র ব্যবসায়ীর লাশের পাশে চিরকুট

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘এই ঘরে আর কোনো দিন আলো জ্বলবে না’

‘এই ঘরে আর কোনো দিন আলো জ্বলবে না’, ‘আজকেই শেষ দিন আমাদের’Ñ এমন লেখা বেশকিছু চিরকুট উদ্ধার করা হয় বায়েজীদের বাসা থেকে। তদন্তের স্বার্থে এসব চিরকুট পুলিশ আলামত হিসেবে রেখেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলেন এস এম বায়েজীদ (৪৫), তার স্ত্রী কোহিনুর পারভীন ওরফে অঞ্জনা (৪০) ও তাদের একমাত্র সন্তান এস এম ফারহান (১৭)। শোবার ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় কাপড় পেঁচানো অবস্থায় ঝুলছিলেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী বায়েজীদ। পাশের খাটের ওপর নিথর পড়ে ছিলেন কোহিনুর ও ফারহান। কোহিনুর ছিলেন গৃহিণী। ফারহান ছিলেন ঢাকা কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে  রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ওই তিন লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশের ভিসেরা সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির কাছে পাঠিয়েছেন চিকিৎসকরা। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক এ কে এম মইনউদ্দিন বলেন, ‘লাশের ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’ মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করে বায়েজীদের কোনো খোঁজ না পেয়ে মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৫ নম্বর রোডের বাসায় ছুটে আসেন তার বন্ধু মিরপুরের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আলী হোসেন। তিনি বলেন, ‘বুধবার রাত দেড়টার দিকে বায়েজীদের নম্বর থেকে একটি মেসেজ আসে মোবাইলে। মেসেজে লেখা ছিল, “হয়তো আজ রাতই শেষ রাত”। তখন ঘুমিয়ে ছিলাম। পরদিন বেলা ১১টার দিকে ঘুম থেকে উঠে মেসেজটি চোখে পড়ে। তখনই বায়েজীদের মোবাইল নম্বরে ফোন করি। কেউ ফোন রিসিভ না করায় বায়েজীদের বাসায় খোঁজ নিতে যাই। দরজায় অনেকক্ষণ ধাক্কা দিয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে কেয়ারটেকারকে ডেকে দরজা খোলার ব্যবস্থা করি। ঢুকতেই ডান পাশে গেটের দেয়ালে লেখা “সরি”। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল এক শরও বেশি ছোট ছোট চিরকুট। একটি চিরকুটে লেখা “আমি মরতে পারলাম না”। রান্নাঘরে থাকা একটি চিরকুটে লেখা ছিল, “এই ঘরে আর কোনো দিন আলো জ্বলবে না”। বাসার চার রুম, বাথরুমসহ সব জায়গায় ছোট ছোট চিরকুট। বেডরুম ছিল ফুল দিয়ে সাজানো। দরজায় লেখা ছিল, “আজ আমাদের শেষ বাসরঘর”।’ পুলিশের ধারণা, গত বুধবার রাতের কোনো একসময় বায়েজীদ স্ত্রী ও ছেলেকে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে হত্যা করেন। পরে নিজে আত্মহত্যা করেন। প্রতিবেশীরা বলছেন, বায়েজীদ ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে এ ঘটনা ঘটাতে পারেন।

সর্বশেষ খবর