রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চবিতে ২৮ বছরে ২০ খুন

বিচার হয়নি একটিরও

বাইজিদ ইমন, চবি

১৯৭৬ সাল, ঘটনাস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। ছাত্র শিক্ষক সবাই ব্যস্ত ক্লাস নিয়ে। কলা অনুষদের দ্বিতীয় তলা থেকে হঠাৎ ভেসে আসে চিৎকার ও আর্তনাদ। দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন আবুল মনসুর নামে এক ছাত্রকে। এটিই চবিতে প্রথম খুন। এরপর কেটে গেছে ৪৩ বছর। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘ হয়েছে লাশের সারি। রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ, আধিপত্য বিস্তার, অন্তঃকোন্দল ও টেন্ডারবাজির কারণে গত ২৮ বছরে চবিতে ২০ খুনের ঘটনা ঘটেছে; যার মধ্যে বিচার হয়নি একটিরও। সদ্যসাবেক হওয়া চবির ভিসি অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু খুনের শাস্তি নিশ্চিত করবে আদালত। যদি বিচার হতো তাহলে খুনের পুনরাবৃত্তি হতো না।’ চাকসুর সাবেক ভিপি মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষক রাজনীতি ও প্রশাসনের দলবাজির কারণেই চবিতে খুনের বিচার হয়নি। তারা নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকলে ক্যাম্পাসে খুনের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে আসত।’

জানা যায়, ১৯৮৮ সালে তৎকালীন জাতীয় ছাত্রসমাজ নেতা হামিদের হাতের কব্জি কেটে চবিতে সংঘাতের রাজনীতি শুরু করে ছাত্রশিবির। ১৯৮৮ সালের ২৮ এপ্রিল নগরীর বটতলী স্টেশনে শিবিরের হামলায় নিহত হন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের কর্মী আমিনুল হক। ’৮৮ সালে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন শিবির কর্মী আইনুল হক। ’৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর শিবিরের হামলায় নিহত হন ছাত্রমৈত্রী কর্মী ফারুকউজ্জামান। ’৯৪ সালের ২৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনের পাশের মাজার এলাকায় শিবির ক্যাডারদের হাতে খুন হন ছাত্রদলের তৎকালীন সাংগঠনিক  সম্পাদক নুরুল হুদা মুছা। ’৯৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত কটেজে হামলা চালিয়ে খুন করা হয় আবৃত্তিকার বকুলকে। ’৯৮ সালের ৬ মে শাহ আমানত হলে শিবিরের হামলায় নিহত হন ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা আইয়ুব নামে এক ছাত্র। ’৯৮ সালের ১৮ মে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের বালুছড়া এলাকায় শহরগামী একটি শিক্ষক-বাসে শিবিরের হামলায় নিহত হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র মুশফিক-উস-সালেহীন। ’৯৮ সালের ২১ আগস্ট পুরাতন বটতলী স্টেশন এলাকায় ছাত্রশিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী সঞ্জয় তলাপাত্র। ’৯৯ সালের ১৫ মে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন শিবির কর্মী জোবায়ের। একই বছর ১৯ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন শিবির কর্মী রহিমুদ্দিন ও মাহমুদুল হাসান। ২০০১ সালের ২৯ ডিসেম্বর হাটহাজারীর ফতেয়াবাদে শিবিরের হামলায় নিহত হন ছাত্রলীগের তৎকালীন সিনিয়র সহসভাপতি আলী মর্তুজা। ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নগরের ষোলশহর রেলস্টেশনে দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত হন মহিউদ্দিন মাসুম। ২৯ মার্চ ফতেয়াবাদ এলাকায় রেললাইনের পাশে হারুনর রশিদ নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই বছর ১৫ এপ্রিল নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুল ইসলাম। ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে নিহত হন মাসুদ বিন হাবিব ও মুজাহিদুল ইসলাম নামে দুই শিবির নেতা। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি সংঘর্ষ চলাকালে নিহত হন মামুন হোসেন নামে এক ছাত্র। ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী তাপস সরকার। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর চবি ছাত্রলীগের যুগ্মসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার দুই বছর পর টেন্ডারবাজির ঘটনায় তাকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা হলেও আজ পর্যন্ত বিচারকাজ শেষ হয়নি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর