রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মাসে ৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে

বিড়ি শিল্পে ভুয়া ব্যান্ডরোল

রংপুর প্রতিনিধি

রংপুরের হারাগাছে বিড়িশিল্প এলাকায় ভুয়া ‘ব্যান্ডরোল’ ব্যবহার করে দেড় শতাধিক কারখানা প্রতি মাসে ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ভুয়া ‘ব্যান্ডরোল’ ব্যবহারের দায়ে শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে মেনাজ বিড়ি ফ্যাক্টরির দুজনকে আটক করেছে র‌্যাব। রংপুর জেলা বিড়ি মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর সঙ্গে অসাধু বিড়ি ব্যবসায়ী ও রংপুর কাস্টমসের কর্মকর্তারা জড়িত বলে জানা গেছে। জেলায় ছোট-বড় মিলে তালিকাভুক্ত বিড়ি কারখানার সংখ্যা ২৭৮টি। এর মধ্যে হারাগাছ এলাকাতেই সিংহভাগ কারখানা অবস্থিত। ইতিমধ্যে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে চালু থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে ২০টি কারখানা নিয়মিত বিড়ির প্যাকেটে সরকারের সরবরাহকৃত ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে থাকে। বাকি দেড় শতাধিক কারখানার মালিক ভুয়া ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে উৎপাদিত বিড়ি বাজারজাত করছেন। এভাবে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কর ফাঁকিবাজ চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের হারাগাছ পৌর কমিটির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার আশিক বিড়ি নামে একটি বিড়ি কারখানা রয়েছে। বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করা আশিক বিড়ির প্যাকেট সংগ্রহ করে সেখানে ভুয়া ব্যান্ডরোল পাওয়া গেছে। বিভিন্ন হাটবাজার থেকে এসব বিড়ির প্যাকেট সংগ্রহ করে দেখা গেছে এতে ব্যবহৃত ‘ব্যান্ডরোল’ ভুয়া, যা সরকারের সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রিন্টিং প্রেসে ছাপা হয়নি।

রংপুর কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিসের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল মান্নান সরদার সংগৃহীত বিড়ির প্যাকেটে লাগানো ব্যান্ডরোল ভুয়া স্বীকার করে বলেন, ‘আমরাও বেশ কিছু অভিযান চালিয়ে এর সত্যতা পেয়েছি।

ভুয়া ব্যান্ডরোল ব্যবহার করায় গত দুই বছরে ১৪৫টি মামলা দায়ের করার পাশাপাশি জরিমানা করেছি। জরিমানা থেকে অর্থ আদায়ের পরিমাণ ১ কোটি ১৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রেস থেকে মালিকরা ভুয়া ব্যান্ডরোল ছাপিয়ে বিড়ির প্যাকেটে ব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এভাবে ফাঁকি না দিলে রাজস্ব আদায় আরও বেশি হতো।’

আবদুল মান্নান আরও বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে রংপুর জেলায় বিড়ির ব্যান্ডরোল থেকে ৩৩৮ কোটি ২০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। ভুয়া ব্যান্ডরোল ব্যবহার না হলে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ হতো।’

রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি স্বীকার করলেও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ এড়িয়ে যান এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘কেউ এমন অনৈতিক আর্থিক লেনদেন করেছেন কিনা তা জানি না।’

ভুয়া ‘ব্যান্ডরোল’ ব্যবহার করে বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে রংপুর জেলা বিড়ি মালিক সমিতির সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, ‘বছরে এ খাত থেকে রংপুর জেলায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। সরকারদলীয় একজন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট ভুয়া ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে বিড়ি বাজারজাত করছে। এর সঙ্গে কাস্টম অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত। তারা এক শ্রেণির বিড়ি মালিকের কাছ থেকে প্রতি মাসে অর্থ নিয়ে থাকেন। এ কারণে প্রকৃত বিড়ি ব্যবসায়ী যারা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ব্যবসা করছেন তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর