শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মারধরের পর বাথরুমে আটকে রাখা হয় গৃহকর্মী জান্নাতিকে

আদালতে রোকসানার জবানবন্দি

মাহবুব মমতাজী

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় ১২ বছরের গৃহকর্মীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গৃহকর্মীর বাবা জানু মোল্লা বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। মামলার আসামি গৃহকর্ত্রী রোকসানা পারভিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করা হলে গৃহকর্মী জান্নাতিকে মারধরের কথা     স্বীকার করেছেন তিনি। আর মারধর করার পর তাকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। সেখানেই জান্নাতির মৃত্যু হয়েছে বলে রোকসানা তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গণেশ গোপাল বিশ্বাস। তবে মামলার অন্য আসামি গৃহকর্তা সাইদ আহমেদ পলাতক রয়েছেন। সাইদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী বলে জানা গেছে। ওই গৃহকর্মীর বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার তেলেআটা গ্রামে। এর আগে বুধবার বিকাল ৩টায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে জান্নাতির লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এ দিন মর্গ কর্তৃপক্ষ জানায়, নির্যাতনে জান্নাতির মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গৃহকর্ত্রী রোখসানা পারভিন সে সময় দাবি করেছিলেন, জান্নাতি মৃগী রোগী। এ রোগে সে মারা গেছে। পুলিশও বুধবার দিনভর এ বিষয়ে তথ্য দিতে লুকোচুরি করে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সেলিম রেজা জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে গৃহকর্মীর লাশে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি।

প্রথমে সুরতহাল রিপোর্ট ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল, পরে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে ডেকে আবার সেটি নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে। এটি হয়তো তারা মূল ঘটনা আড়াল করতে কিংবা অজ্ঞতাবশত করতে পারে। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, নতুনভাবে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির বিষয়টি সঠিক না। তবে আমরা ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ পেয়েছি। ধর্ষণ হয়েছে কি না তা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর জানা যাবে। গতকাল গৃহকর্ত্রীকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি তার জবানবন্দিতে বলেছেন, জান্নাতি তাদের বাড়ির ছাদে একটি ঘরে লুকিয়ে ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর খুঁজে বের করে তাকে বাসায় এনে ব্যাপক মারধর করেন রোকসানা। মারধরে এক পর্যায়ে জান্নাতি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে, আবার তাকে তুলে মারধর করা হয়। মারধর শেষে তাকে বাথরুমে আটকে রাখেন গৃহকর্ত্রী। বাথরুমে সে অচেতন হয়ে পড়ে থাকে।   

মর্গ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত ১১টায় হাসপাতালের ফ্রন্টডেস্কের সামনে এক গৃহকর্মীকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসেন রোকসানা পারভিন নামে এক নারী। তিনি ওই গৃহকর্মীকে জরুরি বিভাগের নার্সের চেম্বারে নিয়ে যান। সেখানে কোনো চিকিৎসা করাতে না পেরে ফিরে যান রোকসানা। এরপর তিনি বুধবার দুপুরে লাশ মোহাম্মদপুর থানার এসআই মিজানুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন। পুলিশের কাছে গৃহকর্ত্রী রোকসানা পারভিন জানিয়েছিলেন, মোহাম্মদপুর স্যার সৈয়দ রোডের ৬/৫/এ নম্বর ভবনে তাদের বাসা। জান্নাতির মৃগী রোগ ছিল। মাঝে মধ্যেই মৃগী রোগ উঠত, ভালো হলে আবার কাজ করত। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সে তার রুমে ঘুমিয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে তিনি তার রুমে গিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর