বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাপ্তাই লেকে নামবে গবেষণা তরী

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কাপ্তাই লেকে নামবে গবেষণা তরী

এই জাহাজের মাধ্যমে লেকের মাছ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান ও সংরক্ষণে নানা পরিকল্পনা, উদ্যোগ এবং সিভাসুর এমএস ও পিএইচডি লেভেলের শিক্ষার্থীরা সারা বছর গবেষণা কার্যক্রম চালাতে পারবেন

 

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কাপ্তাই লেক নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করে। গবেষণায় বলা হয়, ২০০৩ সালে এই লেকে রুই, কাতলা ও মৃগেল এ তিন জাতের মাছের উৎপাদন ছিল ১১৯ মেট্রিক টন। কিন্তু ১৩ বছরের ব্যবধানে ২০১৬ সালে এসে উৎপাদন দাঁড়ায় মাত্র ৫ মেট্রিক টনে। সঙ্গে কমেছে অন্যান্য মাছের উৎপাদনও।

দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ কাপ্তাই লেক। কিন্তু প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে দূষণের কবলে পড়েছে দেশের ঐতিহ্যের এই স্মারক। তবে কাপ্তাই লেক উদ্ধারে দেশে প্রথমবারের মতো ‘সিভাসু গবেষণা তরী’ নামানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই ভ্রাম্যমাণ জাহাজ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে কাপ্তাই লেক ও এর জীববৈচিত্র্যকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের উদ্যোগে এ তরী নির্মাণ করা হয়। এই জাহাজের মাধ্যমে লেকের মাছ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান ও সংরক্ষণে নানা পরিকল্পনা, উদ্যোগ এবং সিভাসুর এমএস ও পিএইচডি লেভেলের শিক্ষার্থীরা সারা বছর গবেষণা কার্যক্রম      চালাতে পারবেন। চলতি মাসের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রীর তরীটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা। সিভাসুর মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এম নুরুল আবছার খান বলেন, ‘আমাদের মৌলিক কাজ দুটি- শিক্ষা ও গবেষণা। এই তরীতে বসে সিভাসুসহ সারা দেশের ফিশারিজ বিভাগের এমএস ও পিএইচডি লেভেলের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নি এবং গবেষণা করতে পারবেন। এ ছাড়া লেক ব্যবস্থাপনা, লেকের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন, কোন উদ্যোগ নিলে লেকের মাছ বৃদ্ধি পাবে, লেক নিয়ে জরিপ পরিচালনা, মাছ কমার কারণ, প্রতিকারসহ নানা বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে। পূর্ণ জোয়ারে তরীটি ৬৮ হাজার হেক্টর আয়তনের লেকে চলাচল করবে।’

সিভাসুর উপপরিচালক (জনসংযোগ) খলিলুর রহমান বলেন, ‘মালয়েশিয়া তাদের কৃত্রিম হ্রদ “লেক কেনিয়র” নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা পরিচালনা করে। পরে তারা ওই লেকে বিপন্ন প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য গড়ে তোলে। তাদের সেই হ্রদের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে কাপ্তাই লেকে নামানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ সিভাসু গবেষণা তরী। এ তরী ১৫ ধরনের কাজ করবে। বর্তমানে তরীটি ব্যবস্থাপনায় সাতজন কর্মরত আছেন।’

সিভাসুর মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদসূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জের একটি জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রাঙামাটির পুরনো হেলিপ্যাড এলাকায় এ জাহাজ তৈরির কাজ শুরু করে। চলতি বছর জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে এ জাহাজ লেকে নামানো হয়। ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাহাজের অভ্যন্তরে ল্যাব তৈরি করা হয়। এ তরীতে প্রায় ১৫টি বিষয় নিয়ে গবেষণার কাজ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে লেকের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের হার বের করা, মাছের অভয়াশ্রম সৃষ্টির জন্য স্থান নির্বাচন, সময়ের সঙ্গে লেকের বিভিন্ন ভৌত রাসায়ানিক পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা, বিলুপ্তপ্রায় মৎস্য প্রজাতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা, লেকে চাষযোগ্য সম্ভাব্য প্রজাতি বের করা, বিভিন্ন মাছের প্রজনন ক্ষেত্রের বাস্তব অবস্থা নিরূপণ, প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ ও পদক্ষেপ গ্রহণ, স্থানীয় জনশক্তিকে খাঁচায় ও পেন কালচারের মাধ্যমে মাছ চাষে উদ্যোগী করা, ঘোনায় মাছ চাষের সুবিধা-অসুবিধাগুলো যাচাই করা, লেকের মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের বিস্তৃতির অবস্থা নিরূপণ, প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে করণীয় নির্ধারণ, লেক ভরাট হওয়ার কারণ উদ্্ঘাটন, বিশ্লেষণ ও নিরূপণে উদ্যোগ এবং লেকের দূষণ দূরীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

জানা যায়, ১৯০৬ সালে সর্বপ্রথম কর্ণফুলী নদীর পানি দিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে তৎকালীন ইংরেজ সরকার সম্ভাব্যতা যাচাই করে। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান সরকার ১৯৫৬ সালে আমেরিকার অর্থায়নে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। ’৬২ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। বাঁধটির দৈর্ঘ্য ৬৭০ দশমিক ৬ মিটার, উচ্চতা ৫৪ দশমিক ৭ মিটার। কাপ্তাই লেক কেবল বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় হ্রদ। প্রায় ২ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ হ্রদটি মূলত একটি কৃত্রিম হ্রদ। সমগ্র রাঙামাটি জুড়েই এ জলাধারটি বিস্তৃত। এর অন্তর্ভুক্ত উপজেলাগুলো হলো রাঙামাটি সদর, কাপ্তাই, বরকল, নানিয়ারচর, লংগদু, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি ও বিলাইছড়ি।

সর্বশেষ খবর