শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছিনতাইয়ের সেই ৯৫ লাখ টাকা হুন্ডির!

মাহবুব মমতাজী

রাজধানীর গুলিস্তানে ছিনতাই হওয়া সেই ৯৫ লাখ টাকা হুন্ডির বলে ধারণা করছেন পুলিশের তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু র‌্যাব কর্মকর্তাদের সন্দেহ, ওই টাকা ক্যাসিনোর। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার এড়াতে কেউ হয়তো টাকাগুলো অন্যত্র সরিয়ে ফেলছিলেন।

১০ অক্টোবর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের এসব টাকা ছিনিয়ে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের ১৫ সদস্যের একটি দল। তবে পালানোর সময় স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন সোহাগ মাঝি (২৫) নামে একজন। পরদিন এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা করেন প্যানারোমা অ্যাপারেলস অ্যান্ড হোমটেক্স ও প্যানারোমা আইল্যান্ড লিমিটেডের মালিক আবদুল হান্নান। সপ্তাহখানেক পরই এ মামলার তদন্তভার চলে যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-পূর্ব) কাছে। এ মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে ১৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তি দেন সোহাগ মাঝি। তদন্তকারীরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় অঙ্কের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা এটি। সোহাগকে গ্রেফতারের সময় তাদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, ভুক্তভোগীদের মাইক্রোবাস, ডিবি পুলিশের ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং একটি ব্যাগে থাকা ২৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে ৬৯ লাখ ১১ হাজার এখনো পাওয়া যায়নি। ১২ অক্টোবর উত্তরা থেকে সোহাগ বিশ্বাস (২৫) নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ছিলেন ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত গাড়ির চালক। তাকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। দুজনই জানিয়েছেন, জাকির নামে একজন তাদের গ্রুপের প্রধান। তিন ভাগে ভাগ হয়ে ১৫ জন টাকা ছিনতাই করতে যান তারা। যে কোনো ছিনতাইয়ের আগে তাদের দলের দুজন ব্যাংকের ভিতরে অবস্থান নিয়ে নজর রাখেন। কোনো গ্রাহক বড় অঙ্কের টাকা তুললেই বাইরে থাকা দলকে খবর পৌঁছে দেন তারা। টার্গেট ব্যক্তি টাকা তুলে ব্যাংক থেকে বের হলে বাইরে অপেক্ষমাণ দুজন মোটরসাইকেলে তার পিছু নেন। দূরে মাইক্রোবাসে অপেক্ষায় থাকে তাদের ‘অপারেশন দল’। মোটরসাইকেলে থাকা দল টাকা বহনকারীর সার্বক্ষণিক গতিবিধি মাইক্রোবাসে থাকা দলকে জানাতে থাকে। এরপর টাকার বাহক সুবিধাজনক স্থানে এলেই রাস্তা আটকে দাঁড়ায় মাইক্রোবাস। ওয়াকিটকি হাতে ডিবি পুলিশের জ্যাকেট পরা ব্যক্তিরা গাড়ি থেকে নেমে শুরু করেন টাকা বহনকারীর গাড়িতে তল্লাশি। বাধা দিলে মারধর করে টাকাসহ বহনকারীকে নিজেদের গাড়িতে তুলে নিয়ে সটকে পড়েন তারা। এ বিষয়ে পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, দুই আসামি ধরা পড়ার পর পুরো তথ্য জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই টাকা ছিল হুন্ডির। তবে এখন মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি। টাকা উদ্ধার ও কয়েকজন আসামিকেও গ্রেফতার করেছে তারা। সূত্র জানায়, মামলার এজাহারে সোহাগ মাঝি ছাড়াও পলাতক হিসেবে খোকন, ফারুক, শাহীন ও মাইক্রোবাসের অজ্ঞাতপরিচয় চালককে আসামি করা হয়।

কেরানীগঞ্জের তাওয়ালপট্টির শাহ আলমের বাড়ির মেসে থাকতেন সোহাগ মাঝি। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর পাজাখালীতে। তার বাবা রফিজ উদ্দিন। খোকনের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলে। ছিনতাইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া জাকির এক মাস আগে উত্তরা থেকে টয়োটা সুপারজেল ব্র্যান্ডের মাইক্রোবাসটি মাসিক হিসেবে ভাড়া নেন। তারা সারা দিন শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান এবং ব্যাংক থেকে শুরু করে রাস্তায় ওত পেতে থেকে ডিবি পরিচয়ে টাকা লুট করেন।

মামলার বাদী আবদুল হান্নান এই প্রতিবেদককে জানান, টাকা বহনের সময় স্কট না নেওয়া তার ভুল হয়েছে। ডিবি পুলিশ কয়েক দিনের অভিযানে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। এদের একজনের কাছে ২ লাখ টাকা, আরেকজনের কাছ থেকে নতুন দুটি মোটরসাইকেল এবং অন্যজনের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুজন পুলিশকে জানিয়েছেন, ছিনতাইয়ের সব টাকা নয়ন ও মোশাররফ নামে দুজনের কাছে তারা জমা দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর