শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইচ্ছামতো ঠিকাদার নিয়োগ, মামলা

রামেক হাসপাতালে পথ্য সরবরাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রোগীদের জন্য পথ্য সরবরাহের ঠিকাদার নির্বাচিত করা হয়েছে ইচ্ছামতো। বিবেচনায় নেওয়া হয়নি দরপত্রের সঙ্গে দাখিল করা পণ্যের দর। এ নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মো. সুমন নামে একজন ঠিকাদার আদালতে মামলা করেছেন। বাতিলের কারণ জানতে চেয়ে এমদাদুল হক (বর্তমানে তিনি ৯টি আইটেম সরবরাহ করছেন) নামে এক ঠিকাদার হাসপাতালের পরিচালককে চিঠি দিয়েছেন। হাসপাতালসূত্র জানান, ৮টি গ্রুপে মোট ৩৮ আইটেমের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদাররা এতে অংশ নিয়ে দরপত্র জমা দেন। ৫ সেপ্টেম্বর দরপত্র বাক্স খোলা হয়। ২৬ অক্টোবর ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কার্যাদেশ হাতে পাওয়ার পর ধরা পড়ে নানা অনিয়ম। সর্বনিম্ন ঠিকাদারকে কাজ না দিয়ে উচ্চ দরে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়েছে। দরপত্রের কার্যাদেশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সবজি গ্রুপে আলু ও পেঁপের মূল্য একই হওয়ায় লটারির মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু পাউরুটির দরে শফিকুল ও আজাদ আলী একই দর দেন। নিয়ম অনুযায়ী সেখানেও লটারি হওয়ার কথা। কিন্তু দরপত্র কমিটি লটারি না করে শফিকুলকে সরবরাহের আদেশ দেন। আজাদ আলী তার কাগজপত্রে সবজি, মাংস, রেশন গ্রুপে কাজ পান। কিন্তু পাউরুটি সরবরাহের গ্রুপে তাকে বাদ দেওয়া হয়। মুরগির মাংস সরবরাহে মো. সুমন সর্বনিম্ন প্রতি কেজি ২১৩ টাকা দর দেন। কিন্তু সরবরাহের কাজটি শফিকুল এন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হয় ২১৪ টাকা দরে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, ৮টি গ্রুপের মধ্যে ৪টি গ্রুপের দরপত্র খোলা হয় প্রকাশ্যে। অন্য ৪টি গ্রুপের দরপত্র খোলা হয় গোপনে। ঠিকাদার এমদাদুল হক অভিযোগ করেন, মাছ, দুধ, স্টেশনারি ও বিবিধ কাজের দরপত্র গোপনে খোলা হয়।

যারা কাজ পেয়েছেন, তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কে কত দর দিয়েছিলেন, তা জানানো হয়নি। এ নিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান। দরপত্র ডকুমেন্টে দেখা যায়, রেশন গ্রুপে শাহাবুদ্দিন হলুদের দর দেন প্রতি কেজি ৫৮ টাকা। কিন্তু কাজটি ১৭০ টাকা দর দেওয়া এমদাদুল হককেও দেওয়া হয়নি। ২২৫ টাকা দর দেওয়া আজাদ আলীকে কাজটি দেওয়া হয়েছে। জিরা প্রতি কেজি ১২০ টাকা দর দেন শাহাবুদ্দিন। কিন্তু সরবরাহের কাগজে তাকে দর দেওয়া হয়েছে ৩৫০ টাকা প্রতি কেজি। স্টেশনারি ও বিবিধ মালামাল সরবরাহে বর্তমান ঠিকাদারকে বাদ দিয়েই সব কটি সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মতিউর রহমান, নূর ট্রেডিং, এম এম করিম ও আলফাজ উদ্দিনকে। পাবনার আর জেড এস এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর রাশেদুজ্জামান সৌরভ জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে স্টেশনারি ও বিবিধ মালামাল সরবরাহ করে আসছেন। কিন্তু এবারের দরপত্রে তার প্রতিষ্ঠানকে অযোগ্য বলা হয়েছে। সব শর্ত মেনে দরপত্র জমা দেওয়ার পরও এমন হওয়ায় তিনি পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। কী কারণে তার দরপত্রটি অযোগ্য হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। দরপত্র পুনর্মূল্যায়ন করা না হলে তিনি আদালতের আশ্রয় নেবেন বলে জানান। হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, যারা কাজ পান না, তারা অভিযোগ করেন; এটাই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে পথ্য সরবরাহের দরপত্র নিয়ম মেনে খোলা হয়েছে। সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যোগ্যদের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর