শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আবারও ফাঁস হলো ইবি ছাত্রলীগ নেতার অডিও কথোপকথন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

আবারও ফাঁস হলো ইবি ছাত্রলীগ নেতার অডিও কথোপকথন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের ৪০ লাখে নেতা হওয়ার অডিও ফাঁসের পর এবার আরেকটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়া ৪ মিনিট ৯ সেকেন্ডের এই অডিওতে উঠে এসেছে ছাত্রলীগ নেতাদের টাকা কামানো ও ক্যাম্পাসে দখলদারিত্বের চমকপ্রদ তথ্য। এই অডিওতে আছে সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক উপসম্পাদক জুবায়ের আল মাহমুদের সঙ্গে রাকিবুল ইসলাম রাকিবের কথোপকথন। সূত্র জানায়, জুবায়ের ছিলেন ইবি ছাত্রলীগের গত কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিমের নিবেদিত কর্মী। এরপর বর্তমান কমিটির সম্পাদক রাকিবের সঙ্গে ভেড়েন। কিন্তু নিয়োগ বাণিজ্য, ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে কমিটি নিয়ে আসাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বর্তমান কমিটিকে কর্মীরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলে বিদ্রোহী গ্রুপে যোগ দেন তিনি। বিদ্রোহী নেতাদের কথা না শুনলে তিনি খুন হতে পারেন বলেও অডিওতে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের সঙ্গে সম্পাদক রাকিবকে সমঝোতা করে চলতে বলেছেন তিনি। ছাত্রলীগের এ দুই নেতার কথোপকথন গতকাল প্রথমে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়। পরে ‘চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ওই পোস্টটি শেয়ার করলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

অডিও কথোপকথন ছিল এ রকম-

জুবায়ের : আরাফাতের কোনো ছেলেপেলের গায়ে হাত দেব না। আরাফাতের যে কটা কাজের ছেলেপেলে আছে, যারা গাঁজা খায় তাদের গাঁজা খাওয়ার টাকা দিতে হবে। যারা একটু মাল খায়, তাদের মাল খাওয়ার টাকা দিতে হবে। যারা হলের সুবিধা চায় তাদের হলে সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু সেই কাজটা...

রাকিব : কী কাজ? আমি এখন রাজু ভাইয়ের কাছে যাব?

জুবায়ের :?রাজু ভাই তোরে মেনে নেবে না।

রাকিব : কেন?

জুবায়ের :?এই হলো মূল কথা। তোর একটাই কাজ পদত্যাগ করা।

রাকিব :?রাজু ভাই কী চায়?

জুবায়ের :?আমি ওইডা জানি না। কমিটি ভাইঙা দিতে কইছে। হালিম, শাহীনের কাছ থেকে টাকা খেয়েছে না রাজু? এই ক্যাম্পাস থেকে ৮-১০ কোটি কামিয়েছে হালিম। ওইখান থেকে ২ কোটি খাইছে না রাজু? তুমি বোঝো না রাজনীতি? তুমি যদি আমারে ২ কোটি টাকা দাও, তুমি আমারে মাডার কল্লেও আমি তোমার কথা শোনব। আমি শিবির মারতাম। ম্যালা আগেত্তে। মনে কর তোরে চাকরি দিলাম। ২০ লাখ পেলাম, চলে গেল ৫ লাখ। মনে কর গিভ অ্যান্ড টেক কোনো প্রমাণ নাই। কোনের প্রমাণ নাই, রেকর্ডিংও নাই কী করতে পারবি তুই আমার? করার কিছু আছে? তুই পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে চইলা যা। তোরে ভালো কিছু পদ দেবনে। আমার ভালো লাগে না ওগুলো। তোরে নিয়ে ভাবতে আর ওগো নিয়ে ভাবতে আর ভালো লাগে না। আমি যে তোর রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করে দিলাম, তুই আমার কথা কখনো শুনিসনি, গুরুত্ব দিসনি। তোর রুমেত্তে সরাই দিছিস আমার খারাপ লাগছে।

তুই তুহিনের কথা শুনিস। আমারে তো কোনো দিন আরাফাতেরা ভালোবাসেনি। আজগে ভালোবাসে আমি রাজনীতি করি তাই। আমারে ইউজ করে। এখনো ইউজ করতেছে অস্বীকার করার কিছু নেই।

রাকিব : আমি কি তোর সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করছি?

জুবায়ের : খারাপ ব্যবহার করিসনি। তোরে খারাপ বানানো হয়েছে মেইনলি। আবদুস সোবহান গোলাপ ফোন দেয় হানিফ ভাইরে। কার জন্য ফোন দেয়? আমি মাডার হয়ে যাই কালুর ছেলেপেলের হাতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার জন্য ফোন দেয় এসপি তানভীররে, এই কাহিনি জানিস? তোরে কোনো দিন কইছি আমি? তুই কি মনে করিস আরাফাত, খসরুর ভরসায় আমি ঢাকায় ঘুরে বেড়াই? তোর মনে হয় তাই? খসরু, আরাফাত আমাকে টাকা দেয়? টাকা দেয় আমার কাকা আবু বকর হোসেন জামাল। কালকেও ৫ হাজার টাকা নিয়েছি। আমি জানি আমি থাকলে তুই ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবি। এই বিশ্বাস আমার আছে। কিন্তু বন্ধু, আমি মাডার হয়ে যাব। আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব। বউ, বাচ্চা আছে বুঝছিস। নাইলে মনে কর হানিফ ভাই আমারে মামলা টামলা দিয়ে...। তুই কি চাস আমি মাডার অইয়া যাই? আমি তোরে কথা কইলে, বাস্তব কথা কইলে তুই বিশ্বাস করবি? মনেত্তে কতা কইলে, আমি কতা কইলে তোর চোখে পানি চইলা আইব। আমার বুকের ভেতর অনেক যন্ত্রণা আছে। আমার যন্ত্রণার চেয়ে আমার বুকে অনেক অভিমান। আমার দুঃখ-কষ্ট আল্লাহ ছাড়া কেউ দেখে না, সত্যি কথা বললাম। লাখ লাখ টাকা আরাফাতের কাছ থেকে নিয়ে একটা টাকাও দেয় নাই। আমি জানি, কে কোন জায়গা থেকে টাকা নিয়ে আইসতেছে।

এদিকে এই অডিও ভাইরাল হওয়ার পর জুবায়ের বৃহস্পতিবার (গতকাল) ইবি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন, যার নম্বর ১৩১১। এতে তিনি জানান, ‘২৬ অক্টোবর সম্পাদক রাকিব সন্ধ্যা ৬টায় তাকে ফোন করে প্রধান ফটকে আসতে বলেন। তারপর তাকে ডরমেটরির তৃতীয় গেটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বহিরাগত সাত-আট জন তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে রাকিবের কাগজে লিখিত বক্তব্যগুলো পড়তে বাধ্য করেন। কথাগুলো মোবাইলে রেকর্ড করেন। পরে এ বিষয়ে বাইরে কাউকে বললে প্রাণনাশের হুমকি দেন।’

এ বিষয়ে ইবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ডাকে ঢাকায় যাওয়ার পর সামনাসামনি বসে জুবায়েরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাকে সব বলেছে। সে আমাকে পদত্যাগ করার জন্য বার বার চাপ দিচ্ছিল। অডিওটি কীভাবে বাইরে এলো আমি জানি না। গত এক মাসে তার সঙ্গে আমার প্রধান ফটকের সামনে দেখা হয়নি। আমি তাকে হুমকি দিইনি। বরং সে বার বার আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছিল।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর