শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রথম দিনে এসেছে তিন হাজার মণ ইলিশ

বেশির ভাগের পেটে ডিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রথম দিনে এসেছে তিন হাজার মণ ইলিশ

টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সরগরম দক্ষিণের সর্ববৃহৎ বরিশালের পোর্টরোড ইলিশ মোকাম। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ১৬ ঘণ্টার মধ্যে ৩ হাজার মণেরও বেশি ইলিশ এসেছে এ আড়তে। তবে আড়তে আসা বেশিরভাগ ইলিশের পেটেই ডিম। নিষেধাজ্ঞার সময় আরও কয়েক দিন পিছিয়ে দিলে জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশ নদী কিংবা সাগরে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেত বলে মনে করেন মৎস্যজীবীরা। এদিকে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বরিশালের পাইকারি মোকামে গতকাল প্রথম দিনে পানির দরে বিক্রি হয়েছে রুপালি ইলিশ। কেজি সাইজের এক মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৮ হাজার টাকায়। গত দেড় বছরের মধ্যে এত কম দামে ইলিশ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশেনের সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল। তবে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ডিমওয়ালা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে যথাসময়েই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বরিশালের ইলিশ বিশেষজ্ঞ ড. বিমল চন্দ্র দাস। নদ-নদী-সাগরে সারা বছরই ডিম ছাড়ে ইলিশ। তবে আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে ও পরের সমটায় ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করে মৎস্য বিভাগ। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে সরকার দেশের ৭ হাজার কিলোমিটার জলসিমায় এবং সাগরে গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর মধ্য রাত পর্যন্ত সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি। নিষেধাজ্ঞাকালীন ফাঁকফোকর গলে অসাধু জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে কিছু মাছ শিকার করে।

মৎস্য বিভাগের দাবি, নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে বলেই প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে নদ-নদীতে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ৬ ঘণ্টার মধ্যেই গতকাল সকালে বরিশাল পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশবোঝাই ট্রলারের পর ট্রলার এসে ভিড়ছে পোর্টরোড ঘাটে। শ্রমিকরা ঝুড়ি ও সাঁজি ভরা ইলিশ উঠাচ্ছেন আড়তে। সেখানে প্রকাশ্য ডাক হেঁকে বিক্রি হচ্ছে ইলিশের লট।

গতকাল প্রথম দিন ১২০০ গ্রামের বেশি সাইজের প্রতি মণ ইলিশ ৩২ হাজার, কেজি সাইজের প্রতি মণ ২৮ হাজার, এলসি সাইজ (৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) ২৩ হাজার এবং ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম সাইজের প্রতি মণ পাইকারি বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার টাকায়।

গতকাল সকালে পোর্ট রোড মোকামে গিয়ে ২৩ হাজার টাকা মণ দরে এলসি সাইজের ২০ কেজি ইলিশ কিনেছেন ৪ বন্ধু। পরে তারা সমান ভাগ করে নেন। তাদের একজন সুমন চৌধুরী বলেন, অন্য সময়ের চেয়ে ২ থেকে ৩০০ টাকা কমে প্রতি কেজি ইলিশ কিনেছেন তারা। এ দামে যথশিগগিরই বরিশালের বাজারে কেউ ইলিশ কিনতে পারেনি বলে তিনি জানান। তুলনামূলক কম দামে ইলিশ কিনরতে পেরে দারুণ খুশি সুমন ও তার ৩ বন্ধু।

অফিসের কাজে গতকাল সকালে পোর্ট রোড মোকামে গিয়ে ইলিশের কম দাম দেখে ৮ কেজি ইলিশ কেনেন সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন সুমন। দুটি ইলিশে ৩ কেজির দাম পড়েছে ২ হাজার ২৫০ টাকা এবং এলসি সাইজের ৫ কেজির দাম পড়েছে ৫৮০ টাকা করে। ২ হাজার ৯০০ টাকা। গিয়াস উদ্দিন সুমন বলেন, ইলিশের দাম অনেক কম। এত কম দামে ইলিশ বরিশালের বাজারে কল্পনাই করা যায় না।

ইলিশের দাম কমে যাওয়ার খবরে পোর্ট রোড বাজারে গিয়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে আধা কেজি ইলিশ কিনেছেন রিকশা চালক সগির মিয়া।

সুমন, গিয়াস ও সগির মিয়ার মতো অনেক মানুষ গতকাল দিনভর সাধ্যমতো ইলিশ কিনেছেন পোর্ট রোড মোকামে গিয়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর