শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে পুলিশের ‘আলোর ইস্কুল’

আলী আজম

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে পুলিশের ‘আলোর ইস্কুল’

বাবা ডাকতে শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই বাবাকে হারায় বীথি। তার লালনপালন ও পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব বর্তায় মায়ের কাঁধে। মা অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালান। বীথির পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এমনই সময় বীথির জীবনে আলোর দিশারি হয়ে আসে ‘আলোর ইস্কুল’। যেখানে ভর্তি হয়ে বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ পায় বীথি। বাড়তি পাওনা হিসেবে মেলে শিক্ষা উপকরণ, ইউনিফর্ম, খাবার ও চিকিৎসা। বীথি এখন ‘আলোর ইস্কুলে’র নিয়মিত ছাত্রী। বীথির স্বপ্ন পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হওয়ার। বীথির মতো আরও অনেকের স্বপ্নের সারথি এখন এই স্কুলটি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কয়েকজন কর্মকর্তার উদ্যোগে ঝরে পড়া, দরিদ্র ও পথশিশুদের জন্য গড়ে ওঠে প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘আলোর ইস্কুল’। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ডিএমপির এটি প্রথম স্কুল। প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের শ্যামপুর জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (সিনিয়র এসি) মো. মফিজুর             রহমান। নিয়মিত পুলিশিংয়ের ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে শিশুদের জন্য এমন উদ্যোগী হওয়ার কথা জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘ঢাকায় ৪০ লাখ মানুষ বস্তিবাসী। এর মধ্যে অনেকেই নানারকম সামাজিক অপরাধে লিপ্ত। বস্তিঘরে বিক্রি হয় গাঁজা, ইয়াবার মতো মাদক। এ ছাড়া এই সমাজের শীর্ষ সন্ত্রাসীর অনেকে বস্তি থেকেই তৈরি হয়েছে। তাই এই বস্তিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের যদি আমরা শিক্ষার আলোয় আনতে পারি তবে ভবিষ্যতে অপরাধ অনেকটাই কমে যাবে। এ ধারণা থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে আমি এই স্কুলটি পরিচালনা করছি।’ বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে মনোরম পরিবেশে ‘আলোর ইস্কুলে’র যাত্রা হয় এ বছরের জানুয়ারিতে। পোস্তগোলার পুলিশ ফাঁড়ির একটি পরিত্যক্ত কক্ষ সংস্কার করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সেখানে অল্প কিছু শিক্ষার্থীকে পাঠদান শুরু হয়। বতর্মানে ‘আলোর ইস্কুল’ চার কক্ষের একটি টিনশেড ভবন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধশত। স্কুলটিতে শিশু থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে। মফিজুর রহমান জানান, ‘আলোর ইস্কুল’ পরিচালনার জন্য একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকার ওয়ারী বিভাগের শ্যামপুর জোনের এসি পদাধিকারবলে সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া কদমতলী থানার ওসি সহসভাপতি, শ্যামপুর মডেল থানার ওসি সাধারণ সম্পাদক এবং আরও দুই পুলিশ কর্মকর্তা স্কুলটি পরিচালনার জন্য রয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের বাইরের কয়েকজন দাতা সদস্য রয়েছেন, যারা সবাই মিলে আর্থিক সহায়তা দিয়ে স্কুলটি পরিচালনা করছেন। তিনি জানান, ভবিষ্যতে তাদের পরিকল্পনা রয়েছে এটি সরকারিকরণের। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের জন্য কারিগরি শিক্ষা চালুরও পরিকল্পনা আছে। বতর্মানে ‘আলোর ইস্কুলে’ চারজন্য শিক্ষক রয়েছেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অসহায় পথশিশু, প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য কাজ করেছি। এরই ধারাবাহিকায় আলোর ইস্কুলের প্রতিষ্ঠা থেকে রয়েছি।’

সর্বশেষ খবর