সোনালী ব্যাংকের দায়ের করা জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউরকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছে নরসিংদীর একটি আদালত। আদালতের বিচারক তাকে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে পরপর তিন দিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল দুপুরে শতকোটি টাকার মোল্লা স্পিনিং মিল অবৈধ দখলের মামলা শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তার পিংকি এ আদেশ দেন। কোর্ট ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার মালিবাগ থেকে সুইডেন আতাউরকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুক্রবার বিকালে মামলার তদন্তকারী সিআইডি কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে নরসিংদীর আদালতে হাজির করেন। আদালত রবিবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে সুইডেন আতাউরকে কারাগারে পাঠায়। মামলা সূত্রে জানা যায়, মোল্লা স্পিনিং মিল দখলের অভিযোগে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে দায়বদ্ধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির অবৈধ দখলদার সুইডেন আতাউরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে মিলটির ঋণদাতা সোনালী ব্যাংক। মামলায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে ব্যাংকের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট বিভাগের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বিচার প্রার্থনা করেন। প্রথমে মামলাটি পুলিশ তদন্ত করলেও পরে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী শহরের হাজিপুরের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের আতাউর রহমান ২০ বছর আগে সুইডেন যান। পরে সেখানে এক বৃদ্ধাকে বিয়ে করে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হন। সেই টাকায় সুইডেনের স্টকহোম ক্রিসেন্টাল এলাকায় রিও নামে একটি দোকান খোলেন। পরে তিনি সুইডেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০৩ সালে নরসিংদীর পশ্চিম কান্দাপাড়ায় সুরম্য ছয়তলা ‘সুইডেন ভিলা’ ভবন নির্মাণ করে স্থানীয়দের নজরে আসেন আতাউর। তখন তিনি সুইডেন আতাউর নামে পরিচিতি পান। এরপর মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকা ভেজাল জমি খুঁজে বেড়ান।
কয়েক বছরের ব্যবধানে নরসিংদী বাজারের গেঞ্জিপট্টি মোড়ে পাঁচতলা বিশিষ্ট সুইডেন প্লাজা গড়ে তুলেন। ২০১৬ সালে শহরের বাগহাটার শতকোটি টাকা মূল্যের মোল্লা স্পিনিং মিল দখল করেন এই নব্য কোটিপতি।
এদিকে আতাউর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি উল্লেখ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তার ব্যাখ্যা দিয়েছে সুইডেন আওয়ামী লীগ। গত ১ নভেম্বর সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম জাহাঙ্গীর কবির ও সাধারণ সম্পাদক ডা. ফরহাদ আলী খান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আতাউর রহমানকে সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি উল্লেখ করে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। আতাউর রহমান সুইডেন আওয়ামী লীগের বর্তমান বা সাবেক কোনো কমিটিরই সভাপতি নন। সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ অনুমোদিত ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্বীকৃত সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম জাহাঙ্গীর কবির ও সাধারণ সম্পাদক ডা. ফরহাদ আলী খান। তাছাড়া আতাউর রহমান প্রায় তিন বছর ধরে সুইডেন ছেড়ে সপরিবারে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সুইডেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।