মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

এখনো বেকার ৪২ শতাংশ ট্রমায় আছেন ৩০ ভাগ

কেমন আছেন সাভারবাসী ৯

মোস্তফা কাজল, সাভার থেকে ফিরে

এখনো বেকার ৪২ শতাংশ ট্রমায় আছেন ৩০ ভাগ

সাভারের রানা প্লাজায় ধসের সাড়ে ছয় বছর পরও শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক বেকার। পঙ্গুত্বের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের সমন্বিত কোনো উদ্যোগও নেই। পাশাপাশি ৩০ শতাংশ শ্রমিক ট্রমায় আক্রান্ত। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় সাভারে বসবাসকারী ৩৪৩ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। নিহতদের পরিবারে এখনো সেই ক্ষত শুকায়নি। সাভার ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। সম্প্রতি রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৪২.৪ শতাংশ এখনো বেকার রয়েছেন। তারা গত সাড়ে ছয় বছরে কোনো ধরনের কাজ পাননি। আর কাজ না থাকায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। সহায়তার নামে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে যে সামান্য তথ্য পেয়েছেন তাতে তাদের পক্ষে চিকিৎসা চালানোই কঠিন ছিল। অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে অনেকে নিঃস্ব হয়ে  গেছেন। অনেকে শেষ সম্বল দুই-তিন শতক জমি অথবা বসতবাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেকেই দিনমজুরে পরিণত হয়েছেন। তাদের একজন মিজান রহমান। দুর্ঘটনায় তার এক হাত কাটা গেছে। ফলে কোথাও কাজ পাচ্ছেন না। দুই বছর ধরে সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয়তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে। ঘটনার দিন ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়। কেন রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় আহতরা কাজ পাচ্ছেন না? এ প্রশ্নের জবাবে ফারাহ কবীর বলেন, আহতদের কেউ কেউ পুরোপুরি কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। আবার কেউ কেউ এখনো ট্রমায় আক্রান্ত। এ ছাড়া অনেকে পোশাক কারখানায় কাজ করতে গেলে ভয় পান। ফারাহ কবীর বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান বা এনজিও তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করলেও সমন্বিত কোনো উদ্যোগ  নেই। ফলে ওই বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ তেমন কাজে আসছে না। ফারাহ কবীর জানান, অ্যাকশন এইড সাড়ে ছয় বছর ধরে এমন পর্যবেক্ষণ করছে। সর্বশেষ গবেষণা পরিচালিত হয় দুর্ঘটনায় আহত ১ হাজার ৪০৩ জন শ্রমিক এবং নিহত শ্রমিকদের পরিবারের ৬০৭ সদস্যের ওপর। এতে দেখা যায়, আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৪২.২ শতাংশ এখনো বেকার। কাজে যুক্ত হয়েছেন ৫৭ শতাংশ শ্রমিক। এ ছাড়া ২৬ শতাংশ শ্রমিক পরিকল্পনার অভাবে কোনো কাজে যুক্ত হতে পারছেন না। রানা প্লাজার অনেক শ্রমিকের এখানো  খোঁজ মেলেনি। শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তালিকায় নিখোঁজের সংখ্যা বলা হয়েছে ৩৭৯ জন। তাদের মধ্য  থেকে দুই দফা ডিএনএ টেস্টে ১৯৯ জনের পরিচয় মিলেছে। এখনো নিখোঁজ ১৬২ জন শ্রমিক। আর তেমনই এক হতভাগ্যের বাবা আবুল কাসেম। রানা প্লাজা ধসে তার বড় ছেলে উজ্জ্বল আর ছেলের বউ  খাদিজা নিহত হয়েছেন। ছোট ছেলে আফজাল এখনো নিখোঁজ। ডিএনএ টেস্টের পরও ছেলের খোঁজ পাননি। তাই প্রতিবছর ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার সামনে আসেন। চোখের জলে ভাসান বুক। এ হতভাগা বাবা বলেন, ‘শুধু এপ্রিলের ২৪ তারিখ নয়, আমি প্রতি মাসের ২৪ তারিখই সাভারে আসি। এখানে আমার সব  শেষ হয়ে গেছে। সন্তানদের হারিয়েছি।’ সন্তান হারানোর ব্যথা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের দিক  থেকে কোনো সহায়তা পাইনি। বায়ারদের কাছ থেকে কিছু পেয়েছি। আর নিখোঁজ সন্তানের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।’ আবুল কাসেমের দুই মেয়ে  বেঁচে আছেন। কিন্তু দুই ছেলেকে হারিয়ে তিনি অসহায়। শোক আর দারিদ্র্য তাকে পথে নামিয়েছে। এখনো ক্ষতিপূরণ নিয়ে চ‚ড়ান্ত কোনো সুরাহা হয়নি। হতাহতদের ক্ষতিপূরণের জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মিলে আইএলওর নেতৃত্বে ৩০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে ২৪ মিলিয়ন ডলার জমা পড়েছে। ৫ হাজার আবেদনের মধ্য থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছে ২ হাজার ৯০৯ জনকে। তাদের আংশিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর