মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
রাজশাহী পলিটেকনিক

এক দশক ধরে সন্ত্রাসের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ত্রাসের রাজত্ব গড়েছে ছাত্রলীগ। গত এক দশকে শতাধিক ঘটনায় বার বারই আলোচনায় সংগঠনটির নেতারা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ রেহাই পাননি তাদের হাত থেকে। এতে বিব্রত নগরের নেতারা। ২০১০ সালে ছাত্রমৈত্রী নেতা রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী সানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাদের আধিপত্য। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত, চাঁদা দাবি, হয়রানি-নানাভাবে এই এক দশক ধরে তারা প্রতিষ্ঠানটিতে ত্রাসের রাজত্ব গড়েছে। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার ছাত্রীরা। শিক্ষার্থী হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবার পরীক্ষা শেষে ছাত্রলীগের নেতা অন্তু, সৌরভের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে পরীক্ষায় পাসের নামে সাবজেক্ট প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা  করে আদায় করা হয়। কিন্তু পরে কোনো কাজ হয় না। ওই টাকা তারা মেরে দেয়। কারণ পরীক্ষার ফলাফলে তাদের কোনো হাত থাকে না। তবে ছাত্রলীগের নেতারা পরীক্ষার সময় প্রকাশ্যে কক্ষে প্রবেশ করে নকল সরবরাহ করে আসেন। শিক্ষকরা তাদের ভয়ে কিছুই বলতে পারেন না।’ শিক্ষার্থী ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমার এক বান্ধবীকে পছন্দ করেছিল ছাত্রলীগের এক নেতা। কিন্তু তার প্রেমে সাড়া না দেওয়ায় তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এমনকি বাধ্য হয়ে মেয়েটি এই পলিটেকনিকই ছেড়ে দিয়েছে। আবার পলিটেকনিকের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময়ও নানাভাবে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারে না।’

শুধু শিক্ষার্থীই নয়, বাদ যাননি শিক্ষকরাও। অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার আগে, আরেক শিক্ষককে শীতের মধ্যে পুকুরে সাঁতার কাটতে বাধ্য করা হয়েছিল। তারা মারতে উদ্যত হয়েছিল একজন শিক্ষককে। শিক্ষক বিপ্লব কুমার দেব বলেন, পরীক্ষার হলে বিশেষ সুবিধা আর খাতায় বেশি নম্বর দাবি করেন তারা। মোবাইল নিয়ে আসতে নিষেধ করা হলেও তারা শুনতে চান না। শিক্ষক মো. নুরুল্লাহ বলেন, তারা যাকে যখন খুশি মারধর করেন। প্রতিবাদ করলে শিক্ষকদের ওপরও হামলা করেন। তিনি জানান, তাকেও একবার মারতে উদ্যত হয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতারা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, রাজশাহী সরকারি পলিটেকনিকের সব ধরনের উন্নয়ন কাজের টেন্ডার, মেয়েদের হয়রানি, নবীনবরণসহ নানা অজুহাতে চাঁদাবাজি, পরীক্ষায় পাস করে দেওয়ার নামেও চাঁদাবাজিতে জড়িত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়াও তাদের মতের বাইরে কোনো শিক্ষার্থী অবস্থান নিলেই তাকে ১১১৯ নম্বর কক্ষে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। ফলে রাজশাহী পলিটেকনিকে ছাত্রলীগ যেন এক আতঙ্কের নাম।

জানা গেছে, এসবের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন ছাত্রলীগ পলিটেকনিক শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেন ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম। আর এসব কাজে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম-সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভ, পঞ্চম পর্বের শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেন, সাবেক ছাত্র শান্ত ওরফে পাওয়ার, সাবেক ছাত্র বনি, সাবেক ছাত্র হাসিবুল ইসলাম শান্ত, সাবেক ছাত্র সালমান ওরফে টনি, সপ্তম পর্বের ছাত্র হাসিবুল, সাবেক ছাত্র মারুফ, সাবেক ছাত্র আবু সায়খান অন্তু, সচিব, মেহেদী হাসান, ওমর ও সাফিন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই স্থানীয় যাদের ছাত্রত্বও নেই। সভাপতি রিগেন ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদুলেরও ছাত্রত্ব নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের হাত করে গত ৩ বছর ধরে এরা এখনো পলিটেকনিক ছাত্রলীগের রাজনীতি ধরে রেখেছেন।

এসব বিষয়ে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজিব জানান, ছাত্রলীগকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্ন অপকর্ম করছে। এর দায় তাদের ওপর আসছে। পলিটেকনিকের ঘটনাটি দুঃখজনক। এখন অনেকে অভিযোগ করছেন। কিন্তু আগে থেকে এসব অভিযোগ তাদের কাছে করলে সংগঠন ব্যবস্থা নিতে পারত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর