বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভাসতে ভাসতে আসছে অস্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাসতে ভাসতে আসছে অস্ত্র

ইছামতী নদীতে গোসল করতে নামেন ভারত ও বাংলাদেশের অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। সীমান্তের ওপার থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভাসিয়ে দেন তারা অস্ত্রের চালান। এরপর নদীর পানিতে ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে সেই অবৈধ অস্ত্রের চালান। সম্প্রতি দেশের সীমান্তবর্তী জেলা যশোরে অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানের এই রুটের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতার হয়েছেন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান (৩২)। তিনি জানিয়েছেন, বেনাপোলের হাবিবুর মেম্বারের মাধ্যমে ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগ্রামের জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অস্ত্রের চালানগুলো তিনি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিবি-উত্তর) মশিউর রহমান জানান, হাফিজুর যশোরের পুটখালী সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করেন। পুটখালী সীমান্তের ইছামতী নদীর মাঝখানে অস্ত্রগুলো পৌঁছে দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। পরে নদীতে সাঁতার কাটা কিংবা গোসল করার আড়ালে অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করেন হাফিজ ও তার সহযোগীরা। এখন পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্রের ছয়টি চালান দেশে আনার কথা হাফিজ স্বীকার করেছেন।

সোমবার রাতে রাজধানীর মিরপুরে টেকনিক্যাল মোড়ে অস্ত্র ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমানকে (৩২) গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পায় ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৭ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চালানের আগে অস্ত্র ও গুলি ভারতের বিহার থেকে কলকাতার অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এনে সীমান্তের গোপন স্থানে রাখা হয়। দরকষাকষি চূড়ান্ত হলে উত্তর চব্বিশ পরগনার সীমান্তবর্তী গ্রাম আংরাইল এবং এপারের সীমান্তবর্তী গ্রাম বেনাপোলের পুটখালীর মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদীতে গোসল করতে নামেন ভারত ও বাংলাদেশের অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। এরপর সীমান্তের ওপার থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগে করে নদীতে অস্ত্র ভাসিয়ে দেওয়া হয়। নদীর পানি থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে গোপনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয় অস্ত্র চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এই সিন্ডিকেটে হাফিজের সঙ্গে রয়েছের পুটখালী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হাবিবুর রহমান বিশ্বাস (৩৮)। চোরাই পথে আমদানি করা অস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে হাফিজুর বিক্রি করতেন। তিনি ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে এসব অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশে আমদানিতে জিল্লুর রমজানকে (৩৫) কাজে লাগাতেন। আর অস্ত্রপ্রতি ৩০ হাজার টাকায় কিনে ঢাকায় এনে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন।

মূলত এই ২০ হাজার টাকা লাভের জন্যই তিনি অবৈধ অস্ত্র আমদানি করে আসছিলেন। মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা ভারতের পুলিশের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করছি। রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় হাফিজুর রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে।’ মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর মেম্বারের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ভারতের চব্বিশ পরগনার বনগ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করতেন। আর জব্দ অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- ম্যাগাজিনযুক্ত নাইন এমএম একটি পিস্তল, দুটি ওয়ানশুটার এবং একটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর