বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

গচ্চা যাবে সরকারের ২২ কোটি টাকা

লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগে অনিয়ম

নিজামুল হক বিপুল

গচ্চা যাবে সরকারের ২২ কোটি টাকা

সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের একটি প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ে লোক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট (এলডিডিপি) প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১৪৩১ জন জনবল নিয়োগ দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু আউটসোর্সিং বিষয়ে সরকারের নীতিমালা উপেক্ষা করে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে লোক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সরকারি নিয়মের বাইরে ৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এতে সরকারের গচ্চা যাবে অতিরিক্ত ২২ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চার হাজার ২০০ কোটি টাকায় দুগ্ধখাতের উন্নয়নে দেশের ৪৬৫ উপজেলায় সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগ লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (এলডিডিপি) গ্রহণ করে। গত অর্থবছরে নেওয়া এই প্রকল্পের জন্য ডিপিপি অনুযায়ী সরকার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের (গ্রেড-২) একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রকল্প পরিচালক করার কথা থাকলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিনকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়। এর মধ্য দিয়ে প্রকল্পের শুরুতেই অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়। সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালক এই প্রকল্পের জন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগের জন্য গত মে মাসে দরপত্র আহ্বান করেন। দরপত্রে দেওয়া শর্তেও অসঙ্গতি ছিল। আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালায় পাঁচ ক্যাটাগরিতে জনবল নিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। সেখানে ক্যাটাগরি অনুযায়ী বেতনও নির্ধারণ করা আছে। নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব ক্যাটাগরিতে জনবল নিয়োগ করা যাবে তার মধ্যে রয়েছে সুপারভাইজার, গাড়িচালক, কেয়ারটেকার, ওয়ার্ড মাস্টার, ইলেকট্রিশিয়ান, লিফট মেকানিক, এসি মেকানিক, জেনারেটর মেকানিক, স্যানিটারি মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, পাম্প অপারেটর, সিকিউরিটি গার্ড, ক্লিনার-এসব পদে আউটোসোর্সিংয়ে লোক নিয়োগ করা যাবে। অন্য পদে লোক নিয়োগের সৃুযোগ নেই। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক নিজের মতো একটি নীতিমালা তৈরি করে এলডিডিপির জন্য ফিল্ড অ্যাসিসটেন্ট নামে একটি পদে লোক নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করেন। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী আউটসোর্সিংয়ে যেসব লোক নিয়োগ হবে তাদের সর্বোচ্চ বেতন হবে ১৯ হাজার ১১০ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ১৬ হাজার ১৩০ টাকা।  কিন্তু এই প্রকল্পে সরকারের নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের সমপরিমাণ ৩৬ হাজার টাকার বেশি বেতনে সহকারী ফিল্ড অফিসার নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। জানা গেছে, দরপত্র আহ্বানের পর জনবল সাপ্লাইকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে কৃষ্ণা সিকিউরিটিজ সার্ভিস লিমিটেড ও পাথমার্ক নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে জনবল নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, এই দুটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকল্পের দুটি লটে অংশ নেয়। শর্ত ছিল, যারা একটি লটে অংশ নেবে, তারা অন্য লটে অংশ নিতে পারবে না। তাছাড়া এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কৃষ্ণা সিকিউরিটিজ সার্ভিস লিমেটেড দুটি লটে অংশ নিতে গিয়ে ভুয়া ব্যাংক সিকিউরিটিজ দেখিয়ে আবেদন করে।

এই অনিয়মের কারণেই প্রতিষ্ঠানের দুটি দরপত্রই বাতিল হওয়ার কথা। সেটা না করে উল্টো তাদের কাজ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, নীতিমালা অনুযায়ী, জনবল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সার্ভিস চার্জ হিসেবে পাওয়ার কথা পাঁচ শতাংশ। সেখানে এলডিডিপির নীতিমালায় ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের বেশি খরচ হচ্ছে ২৩ কোটি টাকা।

মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। নিয়ম হলো- নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড প্রদানের পর ১৫ দিন সময় দিতে হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই সময়ের মধ্যে তারা সিকিউরিটি মানি জমাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য দেবে। কিন্তু সেটি না করে প্রকল্প পরিচালক তড়িঘড়ি করে ১৫ সেপ্টেম্বরই ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেন এবং কার্যাদেশ দেন। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কাজী ওয়াসি উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আপনি অফিসে আসেন। কথা বলব। ডকুমেন্ট নিয়ে যান। যখন তাকে প্রশ্ন করা হলো, দরপত্রে যেসব শর্ত দিয়েছেন সেগুলো কী ডকুমেন্ট নয়, তখন তিনি এর জবাব এড়িয়ে যান। সবশেষে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর