শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
নুসরাত হত্যা

ওসি মোয়াজ্জেম যা বললেন আদালতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় আত্মপক্ষ সমর্থনে দাঁড়িয়ে আদালতে কেঁদেছেন সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। যদিও তাকে এত দিন হাস্যোজ্জ্বলই দেখা গিয়েছিল। গতকাল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকের সামনে তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগে যত বড় শাস্তিই দিন না কেন, তার চেয়ে বড় শাস্তি আমি পেয়ে গেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিকভাবে এ মামলার কারণে হেয় হয়েছি অনেক। আমার ১৫ বছরের ছেলে স্কুলে যেতে পারে না। আমি ১০টি খুন করলেও এত বড় সাজা হতো না। ৭০-৭৫ বছর বয়সী আমার মা, আমার মেয়ে এ ঘটনায় খুব মর্মাহত হয়েছেন।’ মোয়াজ্জেম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি কী অপরাধ করলাম! উনি (বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন) যদি ভিডিওটা পুরোপুরি দেখতেন তবে এ মামলা করতেন না। উনি ভিডিও ঠিকমতো দেখেনই নাই।’ মোয়াজ্জেম বলেন, ‘গত ছয়-সাত মাস আমাকে সারা বিশ্বে কলঙ্কিত করা হয়েছে। চাকরি থেকে আমাকে রংপুরে ক্লোজ করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে জুতামিছিল পর্যন্ত হয়েছে। অথচ আমি এ মামলায় আইওকে (তদন্ত কর্মকর্তা) সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়েছি। আমার মোবাইল তার কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, এমন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে মামলা পড়েছে যিনি আইন অনুযায়ী তদন্ত করেননি। উনি (আইও) নিজেই তদন্তের প্রয়োজনে ছবি তুলেছেন।’ বিচারক তখন জিজ্ঞাসা করেন, জবানবন্দি নেওয়ার সময় তদন্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেমের কোনো ভিডিও করেছেন কিনা? উত্তরে মোয়াজ্জেম বলেন, ‘না’।

 তিনি বলেন, ‘আমার থানায় সিসি ক্যামেরা আছে। আমি তদন্ত কর্মকর্তাকে যে স্ক্রিন শট দিয়েছি, সেখানে তারিখ দেখে তিনি ঘটনার সময় উল্লেখ করেছেন। অ্যাডিশনাল ডিআইজি ফায়েজ স্যার আমার কাছ থেকে ভিডিও নিয়েছেন। সেটা আমি তাকে হোয়াটসঅ্যাপে দিয়েছি। আমি নিজে ফেসবুক ব্যবহার করি না। শুধু ঘটনার পরদিন ৯ তারিখ রাতে এসপি সাহেব ফেসবুকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে দেন। দুই দিন পরই আমি তা আবার ডিঅ্যাকটিভেট করে দিই।’

বিচারক তখন জিজ্ঞাসা করেন, মামলা দায়ের বা তদন্তের জন্য ভিডিও করার কোনো নির্দেশনা আইনে আছে কিনা? জবাবে মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সে রকম কোনো আইন নেই। তবে আপডেটেড টেকনোলজির কারণে আমরা অনেক কিছু ভিডিও করে রাখি। এটা আমাদের প্র্যাকটিস, এ ক্ষেত্রে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কিছু নির্দেশনাও আছে।’ তখন বিচারক বলেন, বাদী, সাক্ষী তো দূরে থাক, গ্রেফতারের পর আসামির ভিডিও বা ছবি না তোলার ব্যাপারে হাই কোর্টের নির্দেশনাই তো আছে। তখন মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জি, তা আছে। এগুলো ভিডিও করে আমরা কাউকে দিই না। শুধু আদালত চাইলে সাক্ষ্য হিসেবে তা উপস্থাপন করা হয়। আমরা এটা ফেসবুক বা ইউটিউবে পোস্ট করি নাই। কীভাবে স্যোশাল মিডিয়ায় গেছে তা আমি জানি না।’ আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বিচারককে বলেন, ‘জ্ঞানত আমি কোনো অপরাধ করি নাই। আমি মুসলমান, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। আমি স্যারের কাছে ন্যায়বিচার চাই।’ এসব বক্তব্য সবিস্তার লিখিত আকারেও আদালতে দাখিল করেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। তবে তিনি কোনো সাফাই সাক্ষী দেবেন না বলে জানান তার আইনজীবী ফারুক আহাম্মাদ। এরপর আদালত আগামী ২০ নভেম্বর এ মামলার যুক্তিতর্কের তারিখ ধার্য করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর