বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আইন পাল্টে রাবি ভিসির মেয়ে-জামাতা নিয়োগ

তদন্তে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের নামে বাণিজ্য, প্রকল্পের টাকা হরিলুটসহ নানা অনিয়মের তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আবদুস সোবহানসহ অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অনিয়ম তদন্তে এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে। চিঠিতে আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সরবরাহ করতেও বলা হয়েছে। রাবির একাধিক সূত্র বিয়য়টি  নিশ্চিত করেছে। গত রবিবার ওই চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দফতর থেকে বুঝিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, রাবির ভিসি অধ্যাপক আবদুস সোবহান ২০১৭ সালের মে মাসে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মেয়ে সানজানা সোবহান এবং মেয়ে জামাই এ টি এম সাহেদ পারভেজকে চাকরি দেওয়াসহ রাবির বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রকল্পের টাকা হরিলুটের মেতে ওঠেন বলে অভিযোগ ওঠে। এসব নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগ পাওয়ায় বিষয়গুলো নিয়ে তদন্তে নামে দুদক। ওই চিঠির সূত্রমতে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ২০১৭ সালের মে মাস থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যেসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কতজন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন তাদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী দিতে বলা হয়েছে দুদককে। এই নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন করে আইনের পরিবর্তন করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭৩তম  এবং ৪৭৫তম সিন্ডিকেট সভার কার্যবিবরণীর ফটোকপিও চাওয়া হয়েছে। ওই সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেখানেও নানা গরমিল আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক সানজানা সোবহানের নিয়োগের নীতিমালা, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিসহ সব আবেদনকারীর আবেদনপত্রের এবং একাডেমিক মেধাক্রমের, নিয়োগপত্রের ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। সানজানা সোবহান হলেন ভিসি আবদুস সোবহানের মেয়ে। সূত্রমতে, বর্তমান ভিসি নিয়োগের পর শিক্ষক নিয়োগে চরম অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে মার্কেটেকিং বিভাগের শিক্ষক এ টি এম সাহেদ পারভেজ ও জুলহাসের নিয়োগেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাদের নিয়োগের সব কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। এসব শিক্ষকের জন্য করা নতুন নীতিমালাসহ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং সব আবেদনকারীর দেওয়া সব কাগজপত্রের ফটোকপি চেয়েছে দুদক। সূত্রমতে, রাবির ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন রিসার্চ (আইইআর) বিভাগের সর্বশেষ ৮ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন নীতিমালার ফটোকপিসহ আবেদনকারীদের দেওয়া সব কাগজপত্রের ফটোকপিও চেয়েছে দুদক। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ও সাইকোলজি বিভাগে সর্বশেষ চারজন শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন নীতিমালাসহ অন্য সব কাগজের ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক এফ এম আলী হায়দার ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী ইসলামের বিষয়েও বিভিন্ন তথ্য চেয়েছে দুদক। তবে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এম এ বারী ফোন রিসিভ করেননি। উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান এ নিয়ে কথা বলতে চান না। তবে দুদকের রাজশাহী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের কিছু বিষয়ে দুদক কাজ করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে নথিপত্র হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর