তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডির ৭ বছর পূর্তিতে কারখানার সামনে নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে নিহতের স্বজন, আহত শ্রমিক, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। গতকাল সকাল থেকেই আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরিন ফ্যাশনের সামনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। এর আগে কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেনের ফাঁসির দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মানববন্ধন কর্মসূচি ও নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অনেকেই প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মানববন্ধনে নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা জানান, আজ (রবিবার) তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকান্ডের ৭ বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু এতদিন পরও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার এবং বিজিএমইএ।
এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
আহত শ্রমিক মফিজুর রহমান বলেন, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর। সন্ধ্যার পরপরই জ্বলে ওঠে তাজরিন গার্মেন্টস। প্রথমে ঠিক বুঝে উঠতে না পারলেও ধোঁয়া আর আগুনের উত্তাপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করেন আট তলা ভবনটিতে কর্মরতরা। কিন্তু প্রধান ফটক তালাবদ্ধ থাকায় আগুনে প্রাণ হারান ১১৩ জন শ্রমিক। বাকিরা প্রাণে বেঁচে গেলেও অনেকেই আহত হন। শ্রমিক নেতারা বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক আটকে দিয়ে ১১৩ জন শ্রমিককে পুড়িয়ে মেরেছিল। এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকা-; যা তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে। অবিলম্বে দেলোয়ারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিতের দাবি জানান তারা। শ্রমিক নেতা লায়ন ইমাম বলেন, দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার ও হতাহতদের ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস)-এর সংগঠক মোহাম্মদ ইব্রাহিম সব ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিককে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ ও মালিক দেলোয়ার হোসেনের কঠোর শাস্তি দাবি করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সানা শামীনুর রহমান শামীম সাংবাদিকদের বলেন, যারা নিহত ও আহত হয়েছিলেন সরকার এবং বিজিএমইর পক্ষ থেকে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘শিল্প কারখানা পরিচালনার জন্য শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা জড়িত তারা যেন আইন মেনে কারখানা পরিচালনা করেন।’ তাজরীন কর্তৃপক্ষ আরেকটু সচেতন হলে হয়তো এ ভয়াবহ অগ্নিকা এড়ানো সম্ভব হতো। তাই কর্তৃপক্ষকে কারখানার সেফটি ও সিকিউরিটির বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।