রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কারা আসবেন নেতৃত্বে তুমুল আলোচনা

সিলেটে আওয়ামী লীগের সম্মেলন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

দীর্ঘ ১৪ বছর পর সম্মেলন আর ৮ বছর পর হবে নতুন কমিটি। সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে এখন তাই উৎসবের আমেজ। বিশেষ করে পদপ্রত্যাশী নেতাদের এখন ঘুম হারাম হওয়ার অবস্থা। জেলা ও মহানগর শাখায় শীর্ষ দুটি পদ পেতে দুই ডজনেরও বেশি নেতা এখন দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত। পদপ্রত্যাশী এসব নেতা একদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, অন্যদিকে কাউন্সিলরদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সিলেট আওয়ামী লীগে সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৫ সালে। এরপর এবার হচ্ছে সম্মেলন। মধ্যখানে ২০১১ সালে সম্মেলন ছাড়াই উভয় শাখায় কমিটি গঠিত হয়। তিন বছরের ওই কমিটি দিয়ে পার হয়েছে আট বছর। সম্প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশে প্রতীক্ষিত সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জানা গেছে, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৫ নেতা আগ্রহী। সভাপতি পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান, বর্তমান সহসভাপতি ও প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি, সহসভাপতি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপি, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ প্রমুখের নাম আলোচিত হচ্ছে। এর মধ্যে লুৎফুর, শফিক, ইমরান ও সামাদ আছেন মূল আলোচনায়। জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদ, বর্তমান যুগ্মসম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন ও অধ্যাপক সুজাত আলী রফিক, কোষাধ্যক্ষ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মোশাহিদ আলী ও মোহাম্মদ আলী দুলাল, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক রণজিৎ সরকার, উপদফতর সম্পাদক জগলু চৌধুরীর নাম আলোচিত হচ্ছে। তবে নাসির, সুজাত, নিজাম, জগলু ও তৌফিকের নাম ঘিরে আছে জোর গুঞ্জন। এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘দলের নেতা-কর্মীরা আমাকে সভাপতি পদে দেখতে আগ্রহী, কাউন্সিলররা আমার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছেন। তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’ কোষাধ্যক্ষ তৌফিক রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমি ১৭ বছর ধরে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি। বরাবরই বঙ্গবন্ধুকন্যার সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল। নেত্রী আমাকে যে পদে দায়িত্ব দেবেন, আমি সে পদেই নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দলের জন্য কাজ করে যাব।’ এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মফুর আলী, অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালিক এবং যুগ্মসম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলোয়ারের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে কামরানকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এক্ষেত্রে নেতা-কর্মীদের কৌতূহল- শেষ পর্যন্ত কারা আসবেন নেতৃত্বে? মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান যুগ্মসম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও বিজিত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল ও এটিএম হাসান জেবুল, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র, বন ও পরিবেশ সম্পাদক জগদীশ দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী এবং সদস্য কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম আলোচনায় আছেন। তবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে জাকির, বিজিত, নাদেল ও আজাদের নামই আলোচিত হচ্ছে বেশি। এ প্রসঙ্গে মহানগর শাখার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে গণমানুষের জন্য। এখানে পদপদবি মুখ্য নয়। তারপরও দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা আমাকে সভাপতি পদে দেখতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটিই সবাইকে মানতে হবে।’ এ শাখার যুগ্মসম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ভোটেই হোক আর নেত্রীর সিদ্ধান্তেই হোক তিনি আশাবাদী এবার তার মূল্যায়ন হবে। বিজিত চৌধুরী বলেন, ‘আমি সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী। যদি নেত্রী দেন, তবে আমি দায়িত্ব নেব। সম্মেলনে ভোটগ্রহণ হলেও আমি প্রার্থী হবো।’ শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘সিলেটে দলকে সুসংগঠিত করতে নেতা-কর্মীরা আমাকে সাধারণ সম্পাদক পদে চাচ্ছেন। তবে দল আমাকে যেখানে মূল্যায়ন করবে, আমি সেখানেই দায়িত্ব নেব।’ আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পদপ্রত্যাশী এসব নেতা বর্তমানে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ছুটছেন। বিশেষ করে দলের সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকের কাছে ধরনা দিচ্ছেন তারা। বিগত দিনে কে দলের জন্য কী করেছেন, বিভিন্ন নির্বাচনে কার কী ভূমিকা ছিল, এসব কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরছেন তারা। এ ছাড়া সিলেটে দলের সব শাখার কাউন্সিলরদের সঙ্গেও পদপ্রত্যাশীরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। অনেকেই মনে করছেন, সম্মেলনে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে নেতৃত্ব আসতে পারে। সে জন্য কাউন্সিলরদের ভোট নিজেদের পক্ষে টানতে কৌশলী ভূমিকা নিচ্ছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। এদিকে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর সাবেক এমপি ইসমত চৌধুরী ও ৭৩ সালের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য আবেদা চৌধুরীর মেধাবী চিকিৎসক কন্যা ড. নাজরা চৌধুরী এবার জেলা কমিটিতে ঠাঁই পাচ্ছেন।

পকেট কমিটি হলে গণপদত্যাগ : ‘বিতর্কিত’ লোকজনকে দিয়ে ‘পকেট কমিটি’ করা হলে গণপদত্যাগ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল বিকালে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ সময় গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ, উপজেলার বাঘা ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমদ, ফুলবাড়ি ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি মশাহিদ আলী, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম, লক্ষ্মীপাশা ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম চৌধুরীসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুপ্রবেশের কথা অস্বীকার হিরণ মিয়ার : গতকাল বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেছেন হিরণ মিয়া। সিলেট জেলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অনুপ্রবেশের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, কোনো দিন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দল করিনি। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।

উল্লেখ্য, সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় গত ২৪ নভেম্বর। তবে সেদিন নতুন কমিটি আসেনি। পরদিন সমঝোতার ভিত্তিতে সভাপতি পদে নিজাম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক পদে হিরণ মিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বিতর্ক দেখা দেয় হিরণ মিয়াকে নিয়ে।

সর্বশেষ খবর