সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সমন্বয়ের দীর্ঘসূত্রতায় চলন্ত ট্রেনে ছিনতাই-নাশকতা

পর্যাপ্ত জনবল চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

ট্রেনে এলার্ম চেইন পুলিং (বিশেষ হুকের মাধ্যমে ট্রেন থামানো) ব্যবহার করে নাশকতার ঘটনা বাড়ছে। ঘটছে চুরি, ছিনতাই, মাদক পাচার ও চোলাচালানসহ খুন-খারাবি। দুষ্কৃতকারীরা ঘটনার পর কৌশলে এলার্ম চেইন পুলিং ব্যবহার করে চলন্ত ট্রেন থামিয়ে সটকে পড়ছে। সমন্বয়ের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এ জাতীয় ঘটনার দীর্ঘ সময় পর চলন্ত ট্রেনে দায়িত্বরত পুলিশ ঘটনাটি জানতে পারে। ইতিমধ্যে দুষ্কৃতকারীরা নাশকতা ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে সটকে পড়ে। ফলে রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের দীর্ঘসূত্রতায় চলন্ত ট্রেনের নাশকতা থামছে না। একইভাবে চলন্ত ট্রেনে পুলিশের পর্যাপ্ত সদস্য না থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন সংকটের কারণেই নাশকতা প্রতিরোধ এবং দুষ্কৃতকারীদের আটক করতে হিমশিম খেতে হয় বলে দাবি রেল প্রশাসনের। তবে এসব বিষয় দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে রেলওয়ে কর্র্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে নাশকতা প্রতিরোধে চলন্ত ট্রেনে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের দ্রুত তথ্য প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়। সেই সঙ্গে পুলিশ সদস্য বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। যাতে করে প্রতিটি ট্রেনে প্রয়োজনীয় পুলিশ মোতায়েন করা যায়। চিঠি সূত্রে জানা গেছে, একটি ১৬ থেকে ১৮ বগির    ট্রেনে পুলিশ থাকে ৩ থেকে ৪ জন। চলন্ত ট্রেনের একটি বগিতে একজন করে অ্যাটেনডেন্ট, একজন গার্ড, দুজন লোকোমাস্টার/সহকারী লোকোমাস্টার ও কনট্রাক্টর গার্ড দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ছিনতাই বা নাশকতার ঘটনা ঘটলে আক্রান্ত যাত্রী সেই অভিযোগ অ্যাটেনডেন্টকে জানাতে হয়। আর অ্যাটেনডেন্ট রেলের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানান। এই সময়ে দুর্বৃত্তরা সটকে পড়ে। তা ছাড়া ট্রেনে এলার্ম চেইন পুলিং প্রকৌশলগত বিষয় হওয়ায় কোন বগিতে সেটি ব্যবহার হয়েছে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট ধারণা থাকে না পুলিশ ও রেলকর্মীদের। ফলে পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত দুষ্কৃতকারীদের আটক করা সম্ভব হয় না।  রেলওয়ে পুলিশ ও ট্রেনকর্মীদের সমন্বয়হীনতায় ট্রেনে এলার্ম চেইন পুলিং ব্যবহার করে চলন্ত ট্রেনে নাশকতার পরিমাণ বাড়ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলের বগিগুলো এখনো যাত্রীবান্ধব হয়নি। দুষ্কৃতকারীরা চোরাচালানসহ বিভিন্ন নাশকতার জন্য বর্তমানে চলন্ত ট্রেনকেই বেছে নিচ্ছেন। তাছাড়া একটি আন্তঃনগর ট্রেনে ৭০০ থেকে এক হাজার যাত্রী পরিবহন করলেও তাদের নিরাপত্তায় তিন থেকে চারজন পুলিশ সদস্য থাকায় নাশকতা এড়ানো কঠিন।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, কুমিল্লা থেকে কসবা পর্যন্ত ট্রেনে এলার্ম চেইন পুলিংয়ের ঘটনা বেশি হয়। এক সময় রাজাপুরে পুলিশ ফাঁড়ি ছিল। সেটি বন্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্টেশনে টহল পুলিশ না থাকায় নাশকতা করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে রেল প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে এলার্ম চেইন পুলিংয়ের মাধ্যমে ট্রেন থামানোর ঘটনা হয়েছে ৬৫৪টি। আর ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হয়েছে ৬৩৪টি। তবে ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) হয়েছিল ৫৮৩টি। সর্বশেষ ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে হয়েছে ৪৫৪টি। জানা গেছে, শীত মৌসুমে এ জাতীয় ঘটনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাচালানির পণ্য ওঠানোর জন্য ট্রেনগুলোতে এলার্ম চেইন পুলিং ব্যবহার হয়। আবার ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম স্টেশনে ঢোকার আগেই আবারও এলার্ম চেইন পুলিং ব্যবহার করে ট্রেন থামিয়ে পণ্য নিয়ে সটকে পড়ে। এ জন্য ঢাকা-ক্যান্টনমেন্ট-তেজগাঁও, তেজগাঁও-ঢাকা, আড়িখোলা-পুবাইল, টঙ্গী-ভৈরববাজার, ঢাকা আউটার, কুমিল্লা-কসবা, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, দেওয়ানহাট, কদমতলী এলাকায় এলার্ম চেইন পুলিং ব্যবহার করে ট্রেন থামানো হয়। অর্থাৎ ট্রেনগুলো গন্তব্যস্থলে পৌঁছার আগেই থামিয়ে চোরাইপণ্য নামিয়ে ফেলে চোরাইপণ্য বহনকারীরা।

সর্বশেষ খবর