মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বস্তির ভোটে নজর প্রার্থীদের[

শামীম আহমেদ

বস্তির ভোটে নজর প্রার্থীদের[

এখনো চূড়ান্ত হয়নি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিনক্ষণ। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ওয়ার্ডগুলোয় বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ডিএনসিসি ২০ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের ছয় নেতা। মাঠ গোছাতে নিজের কর্মীদের ঘরে ঘরে পাঠাচ্ছেন। নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির তিন নেতার নাম শোনা গেলেও তাদের এখনো প্রকাশ্য প্রচারণায় দেখা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা ও দুই দলের নেতা-কর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভোটব্যাংক হিসেবে সম্ভাব্য সব প্রার্থীর নজর বস্তিগুলোর দিকে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সকাল-বিকাল বস্তিগুলোতে গিয়ে মানুষের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে না নামলেও পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখছেন।

জানা গেছে, বনানী এবং গুলশান থানার একাংশ নিয়ে গঠিত ২০ নম্বর ওয়ার্ডে গত মেয়র নির্বাচনে ভোটার ছিল ৬৫ হাজারের কিছু কম। নিকেতন, বনানী, মহাখালী ওয়্যারলেস গেট, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, চেয়ারম্যানবাড়ী, আমতলা ছাড়াও সাততলা বস্তি ও কড়াইল বস্তির একাংশ পড়েছে এই ওয়ার্ডে। এর মধ্যে শুধু সাততলা বস্তিতেই ভোট আছে প্রায় ১১ হাজার। তাই প্রার্থীরা মাদকমুক্ত ওয়ার্ড গড়ার পাশাপাশি বস্তিবাসীর জীবনমান উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে গত নির্বাচনে বস্তির উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ বস্তিবাসীর। তারা বলছেন, বর্ষা মৌসুমজুড়ে সাততলা বস্তিতে ছিল ময়লা পানি ও তীব্র দুর্গন্ধ। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ থাকতে হয়। এ বছর ডেঙ্গুতে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে এই বস্তিতে। তুলা মিজানের বাড়ির ভাড়াটিয়া হাশেম হারিয়েছেন তার চার বছরের শিশুসন্তানকে। এমনকি একমাত্র কবরস্থানের লাশ গোসল করানোর ঘরটি এখন মাদকসেবীদের আখড়া। কবরস্থানটি পানিতে ডুবে থাকায় কবর দেওয়া যায় না। এ ছাড়া ফুটপাথ দখল, মাদক, জলাবদ্ধতা, ঘিঞ্জি ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়ে  ক্ষোভ রয়েছে ওয়ার্ডবাসীর মধ্যে। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন জয়ী হলে। প্রতিশ্রুতিতে প্রত্যেকেই মাদকমুক্ত ওয়ার্ড গড়াকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ ছাড়া রাস্তাঘাট সংস্কার, ফুটপাথ দখলমুক্ত করাসহ ওয়ার্ডকে শতভাগ বসবাসের উপযোগী করে তোলার অঙ্গীকার করছেন।

জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাছির আবারো প্রার্থী হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের ব্যানারে লড়তে চান তিনি। তিনি নিজেকে বনানী থানা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি দাবি করলেও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য প্রার্থীরা তার এ দাবিকে ভিত্তিহীন ও ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে জানান। তবে আগে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মো. নাছির এলাকায় বেশ প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেন বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ নেতা এ কে এম জসিম উদ্দিন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আসলাম, ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান হাওলাদার, ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান দুলাল ও থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন। এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে না এলেও বিএনপি নেতা হাবিবুল্লাহ হবি, মিজানুর রহমান বাচ্চু ও মো. সেলিম (যাদু সেলিম) ২০ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। সম্ভাব্য এই তিন প্রার্থী বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ছাড়াও নীরবে নির্বাচনের মাঠ গোছানোর কাজ করছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিটুও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কাউন্সিলর নাছির বলেন, ‘দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে আমি প্রায় ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। ওয়ার্ডকে মাদকমুক্ত করা, রাস্তা সংস্কারসহ ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এবারও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে এলাকাবাসীর সেবা করতে চাই।’ বনানী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার জন্ম এখানে। সারা জীবন আওয়ামী রাজনীতি করেছি। রাজনীতিবিদ হিসেবেই মরতে চাই। দল চাইলে এবার কাউন্সিলর প্রার্থী হতে চাই। ওয়ার্ডবাসীর সেবা করতে চাই।’

সর্বশেষ খবর